• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অপরিকল্পিত খাল খননে লামায় শতাধিক বসত-বাড়ি ভাঙনের মুখে

  মো. নুরুল করিম আরমান, লামা

২০ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৯
ভাঙন
খালের উপর ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

বান্দরবানের লামা উপজেলার মধুঝিরি নামের একটি পাহাড়ি খাল পুনঃখননের কারণে পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টির সময় উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে খালের দুপাড়ের বসতঘর এবং বেশ কয়েকটি ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে খালের গর্ভে বিলীন যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

গত কয়েক দিনে অনেকের মূল্যবান অবকাঠামো এবং ফসলি জমি খালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। আর খাল থেকে উঠানো মাটি আবাদি জমিতে স্তুপ করে রাখার কারণে পুনরায় সেটা খালে গিয়ে ভরাটসহ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুপাড়ের বাসিন্দারা। এতে মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। অপরিকল্পিত ডিজাইন, প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ না করা, বাস্তবতা বিবর্জিত স্পেসিফিকেশন এবং নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে মধুঝিরি খালের পুনঃখনন কাজ জনভোগান্তির কারণ হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, লামা পৌরসভা এলাকার ৩, ৭নং ওয়ার্ড ও লামা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় নুনারঝিরি নামের একটি পাহাড়ি খাল। এই খালের দুপাড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে শতশত পরিবারের লোকজন বসবাস করে আসছে প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪ জেলার অভ্যন্তরের ছোটো নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় উপজেলার মধুঝিরি খালের ৩ দশমিক ৮০ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ হাতে নেয়।

৮৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের এই প্যাকেজটি বাস্তবায়নের জন্য নোয়াখালী জেলার মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত ৮ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়ে গত ২৭ জুন শেষ হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনিয়ম ও অপরিকল্পিতভাবে খননের কারণে খালের দুপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি খালের ওপর নির্মিত ব্রিজগুলোর নিচের অংশের মাটি সরে দেবে যাচ্ছে। এছাড়া খননের সময় খাল থেকে উঠানো কাদামাটিগুলো দুপাড়েই স্তুপ করে রাখা হয়। ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটিগুলো সেই খালে পড়ে তলদেশ ভরাট হয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।

ভুক্তভোগী আরো বলেন, খালটি এখন এলাকাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার অবস্থা নদীর বাঁধভাঙা এলাকার লোকজনের চেয়েও খারাপ হয়ে উঠেছে। চলতি বর্ষার মধ্যেই বেশ কয়েকটি বসত-বাড়ি খালের ভাঙন কবেলে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী মো. সামছুল আলম বলেন, যতই বর্ষণ হোক, আগে কখনো খালে ভাঙন দেখা যায়নি। পুনঃখননের কারণে আমার বসতবাড়ির তিন দিকেই ধসে পড়েছে। খননের ফলে খালে দুপাড়ের মাটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। এখন দুই লাখ টাকা খরচ করেও ভাঙন ঠেকাতে পারছি না। চলতি বর্ষার মধ্যেই বসতঘরটি খালে বিলীন হয়ে যাবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় বসবাস করবো বুঝতে পারছি না।

নয়াবাজারের বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, খাল খননের পরপরই নয়াপাড়া এলাকায় নির্মিত ব্রিজটি মাটি সরে দেবে গেছে। এখন খাল পারাপারে শত শত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মধুঝিরি পুনঃখনন করার পর বর্তমানে খালপাড়ের বসত-বাড়িসহ মূল্যবান স্থাপনা যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল জানান, সমতল এলাকার খাল খনন এবং পাহাড়ি খাল খনন একই ডিজাইনের করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি সরেজমিন পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, পুনঃখননকৃত মধুঝিরি খালের ভাঙন রোধ ও বসত-বাড়িসহ স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুনঃখননকৃত খালের বিষয়টির বর্তমান অবস্থা প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে। খালের উভয় পাশের বসতবাড়ি ও অবকাঠামো রক্ষায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড