সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে ১৪ দশমিক ৩৫ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপরে। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনার পানি। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। এদিকে সাত থেকে আট দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের ২৭৭ গ্রামসহ দুটি পৌরসভা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রতিদিন যমুনার পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ঘরবাড়িসহ রান্নাঘর ও চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাবার না পেয়ে অনেকই না খেয়ে দিন পার করছেন। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে পানিবন্দি এলাকাগুলোতে। এছাড়া সারাক্ষণ পানির মধ্যে থাকায় হাত-পায়ে ঘাসহ বিভিন্ন চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে পানিবন্দি ওই সব মানুষদের শরীরে।
এদিকে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই সিরাজগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষেরা উঁচু বাঁধ, শিক্ষা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে।
বন্যার পানিতে আটকে পড়া একটি অ্যাম্বুলেন্স (ছবি : দৈনিক অধিকার)
ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে সীমিত আকারে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও অধিকাংশ বন্যার্ত মানুষের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ফলে বানভাসি মানুষেরা খাবার সঙ্কটে রয়েছেন।
সরেজমিনে শুক্রবার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) যমুনার ভাঙন থেকে উপজেলার মেঘাই, নতুন মেঘাই, পাইকড়তলী, কুনকুনিয়া ও পলাশপুর গ্রামের দেড় হাজার পরিবারকে রক্ষায় নির্মিত রিং বাঁধটির ফটল বৃদ্ধি পেয়ে মেঘাই আটাপাড়া অংশে প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়। এতে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ওই পাঁচটি গ্রাম মুহূর্তেই প্লাবিত হয়ে যায়। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া পানিবন্দি পরিবারগুলোর ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার খড়িও। এদিকে নলকূপসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মিলছেনা বিশুদ্ধ খাবার পানি। অন্যদিকে শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি। পানিবন্দি বেশির ভাগ মানুষই বন্যার পানির মধ্যে নৌকায় ও ঘরের ভেতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন। ফলে শুকনো খাবারের তীব্র সঙ্কটে পড়েছে পানিতে আটকে পড়া ওই সব পরিবারগুলোর। এদিকে যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। শত শত মানুষ একসঙ্গে বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে ঝুপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে পরিবার-পরিজনসহ গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রাস্তাঘটাসহ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে বন্যার পানি (ছবি : দৈনিক অধিকার)
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের দই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৩৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বন্যার্ত মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৫৫ হাজার ৭২৪টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯৫৯টি। বন্যায় এক হাজার ৩৪৭টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ২৭ হাজার ৬৩৩টি বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ১৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) হাবিবুল হক জানান, জেলার প্রায় সাত হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেছে এবং স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেগুলো বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৩৫৩ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মজুদ রয়েছে ৩৪৬ মেট্রিক টন চাল, তিনি লাখ টাকা। এ সময় আরও পাঁচ লাখ টাকা, ৫শ মেট্রিক টন চাল ও চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও উল্লেখ করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড