আব্দুস ছালাম সফিক, সাটুরিয়া মানিকগঞ্জ
‘ভাগ্যরাজ’ কোনো ব্যক্তি নয়। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের খাইরুল ইসলাম খান্নুর পালিত বিশাল এক ষাঁড়ের নাম ‘ভাগ্যরাজ’। এ বছরে দেশের সর্ববৃহৎ কুরবানির পশু বলেই ধরা হচ্ছে এই ভাগ্যরাজকে। তাই তো আদর করে ভাগ্যরাজ নাম দিয়েছেন খামারির মেয়ে ইতি আক্তার।
ইতি আক্তার জানায়, ভাগ্যরাজ সাড়ে আট ফুট লম্বা, ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতা, বুকের বেড় ১১৭ ইঞ্চি। আর ওজন ২ হাজার ৭৪ কেজি! বেশ জামাই আদরেই রাখা হয়েছে দুই বছর আট মাস বয়সী ভাগ্যরাজকে।
জানা গেছে, বৃহদাকার এই ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিনের বাজেট প্রায় ২ হাজার টাকা। খাবারের মেন্যুতে থাকে কলা, মাল্টা, কমলালেবু, চিড়া, আঙুর ফল, আখের গুড়, ইছব গুল, খৈল ও বেলের শরবতসহ আরও অন্যান্য দামি দামি খাবার দাবার।
শুধু আদর যত্নেই নয় ভাগ্যরাজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রাখা হয়েছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক। নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পুলিশ টহল দেয় বাড়ির চারপাশের রাস্তায়।
এত উন্নত আড়ম্বরপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা যার, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সেই ভাগ্যরাজের মালিক তার দাম হাঁকাচ্ছেন ২২ লাখ টাকা! ভাগ্যরাজেই আকার, আকৃতি ও ওজনের দিক থেকে দেশের সবচাইতে বড় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদেরও।
ভাগ্যরাজকে দেখতে প্রতিদিন ওই খামারির বাড়িতে ভিড় করেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোর, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ভুল করেন না।
৫১ মণ ওজনের ভাগ্যরাজ ( ছবি: দৈনিক অধিকার)
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. খোরশেদ আলম বলেন, ভাগ্যরাজকে দেখতে দেলুয়া গ্রামের খায়রুল ইসলাম খান্নুর বাড়ি গেলে আমি জানতে পারি এর বর্তমান বয়স দুই বছর আট মাস। চার দাঁতের ভাগ্যরাজ গরুটিই আমার জানা মতে বর্তমানে দেশে আকার ও ওজনে সবচেয়ে বড়।
খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নুর সঙ্গে আলাপ কালে জানা যায়, গত বছর কুরবানির ঈদের পর সাটুরিয়া উপজেলার কামতা এলাকার কৃষক মজিবর রহমানের থেকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ক্রয় করেছিলেন ২৫ মণ ওজনের এই হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি। এক বছর লালন-পালনের পর এই সময় গরুটির বর্তমান ওজন হয়েছে ৫১ মণ। এবার তিনি ভাগ্যরাজর দাম হাঁকাচ্ছেন ২২ লাখ টাকা।
খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নুর স্ত্রী জানালেন, বিশাল আকারের এই গরুটির পরিচর্যা করা খুবই কঠিন। দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার বার গোসল করাতে হয়। সারাদিন বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে হয়। বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়।
সারাদিনই প্রায় এই গরুটির যত্ন করতে হয়। এক ভাগ্যরাজর যত্ন করতে করতে খামারে বাকি ১১টি গরুর যত্ন নেওয়ার ফুরসতই পাওয়া যায় না। বাড়ি থেকেই যেন ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন ভাগ্যরাজকে সেই ব্যবস্থা করতে সরকারি সহায়তাও প্রার্থনা করেছেন তিনি।
খামারির গত বছর এসএসসি পাশ করা মেয়ে ইতি আক্তার বলেন, ২০১৭ সালে সাভার শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গবাদি-পশু, হাস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তিনিই এখন খামারের গরুর সার্বিক দেখাশোনা করেন। এ ছাড়া স্থানীয় চাচিতারা বাজারে বসে গবাদি পশুর বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেনও তিনি।
ইতি আরও জানান, গরুটিকে ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। তাই গরুটির নাম রেখেছি ভাগ্যরাজ। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার খাবার খায়।
সাটুরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম ভাগ্যরাজকে বিশাল উল্লেখ করে বলেন, শত্রুতা করে কেউ এর ক্ষতি করতে পারে। কিংবা চুরিও হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আমরা ভাগ্যরাজের প্রতি নজর রাখছি। বিশেষ করে রাতে টহল পার্টিকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজা বাবু নামের এক গরু সুনামগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছে সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন ওই খান্নু পরিবার।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড