সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার আটাপাড়া পয়েন্টে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে হঠাৎ করেই যমুনার কোল ঘেষে পাউবো নির্মিত রিংবাঁধটি ভেঙে পড়ে। এতে প্রবলবেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। মানুষজন আতঙ্কে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। সবাই জীবন বাঁচাতে ঘরের টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী সবকিছু ফেলে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে নতুন মেঘাই, পাইকরতলীসহ পাঁচটি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাহাজার ঘর পানিতে ডুবে যায়। প্রতিটি পরিবারের সকল আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। যারা ঘর থেকে বের হতে পারেনি রাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পাঁচ গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ শিশুরা এমন দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়।
বুধবার ( ১৭ জুলাই) সকালে প্রত্যেকে নিজ বাড়িগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আহাজারি করতে থাকে। পানির মধ্যে ভেজা চাল-ডাল, হাড়ি-পাতিল কাঁথা বালিশসহ কিছু জিনিস উদ্ধার করে। অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিস এখনো পানির নিচেই রয়েছে। আবার অনেকের বসতভিটা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হওয়ায় এখন পর্যন্ত কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। ঘরের কাছে পৌছানোর মত নৌকা না থাকায় বাঁধের ওপর দাঁড়িযে হা-হঁতাশ করছেন।
বুধবার সরেজমিনের বাঁধভাঙ্গা কাজিপুর নতুন মেঘাই এলাকায় গেলে বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে যাওয়ায় আব্দুল খালেক ও রতন সরকারসহ অনেকে এ দৃশ্যের কথা বর্ননা করেন। এছাড়াও বাঁধ ভাঙার কারণে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় কাজিপুর- সোনামুখী সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মেঘাই নতুন পাড়া গ্রামের আলেয়া, আনিছা ও খোদেজা জানান, আমাদের বাড়িগুলো গ্রামের মাঝখানে। মাত্র একঘণ্টার মধ্যে সবকিছু তলিয়ে যায়। শুধু পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারেনি। রাতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। এতো পানি যে নৌকা ছাড়া বাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব না। নৌকা না থাকায় এখনো বাড়ি থেকে কিছুই বের করতে পারেনি। দুপুর পর্যন্ত রান্না করা হয়নি। সকলেই না খেয়ে রয়েছেন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, রাতে ফায়ার সার্ভিস ও দমকল বাহিনীর কর্মীদের সহায়তা পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করা হয়েছে। বসতভিটা মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যাওয়ায় কোনো কিছু উদ্ধার করতে না পারায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সকালেই ক্ষতিগ্রস্ত ৩শ পরিবারের মধ্যে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন বসতভিটা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সরকারি তথ্যে ২১ হাজার পরিবারের ১৮১টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ২৫৫ মোট্রক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অধিকাংশ এলাকায় কোনো ত্রাণ সহায়তা এখনো পৌঁছায়নি।
চরাঞ্চলে গবাদি পশু রাখার জায়গা না থাকায় কৃষকরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে ওয়াপদার ধারে ঝুপড়ি তুলে গরু-ছাগল-হাস মুরগির সঙ্গে শিশু সন্তান নিয়ে এক ঘরে রাত কাটাচ্ছেন। এসব বানভাসী মানুষগুলো সরকার ও বিত্তবানদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের খলিশাকুড়া গ্রামের শুকুর আলী,মনজুরা, শাহ আলী জানান, হঠাৎ করে কয়েক দিন আগে বাড়ি, ঘরে পানি ওঠায় আমরা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। পানিতে থেকে হাত-পায়ে ঘাঁ হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে কোনো প্রকার ধান-চাল বের করতে পারিনি।
অন্যদিকে চরা লের নাটুয়ারপাড়া-খাসরাজবাড়ী সড়কে ধস নামায় দুটি এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধের ৪শ মিটার ধসে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড