কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর বনকুড়া নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই বাঁধ ভেঙ্গে যায়।
বুধবার (১৭ জুলাই) ভোর রাতের দিকে বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার ভোর রাতের দিকে বাঁধের ২শ ফুট অংশ ভেঙে যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রবিবার সন্ধ্যা থেকে আত্রাই নদীর ৩০ পয়েন্টে বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দেখা যায়নি। এর ফলে এই ভাঙন হয়েছে। গভীর রাতে নদীর ডান তীরে মূল বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ফাটল অংশে বালুর বস্তা ও মাটি ফেলেও ভাঙ্গন রক্ষা করতে পারেননি।
এদিকে এরইমধ্যে মান্দা উপজেলার বনকুড়া, চকবালু, ভরট্ট, শিবনগর, দাসপাড়া, শহরবাড়ি, করনোভা, পারশিমলা, মহলা কালুপাড়াসহ অন্তত ২২ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আশেপাশের ফসলের মাঠ, আমন ধানের ফসল ও সবজি ক্ষেত। ক্রমেই নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। মান্দা ছাড়াও পাশের আত্রাই, রানীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শংকা করা হচ্ছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে আত্রাই নদীর পানি মান্দা উপজেলার জোতবাজারে বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও পত্নীতলার উপজেলার শিমুলতলীয় ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অবহাওয়া পরিষ্কার হলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিক ভাবে ৮২৯ হেক্টর আউশ, ৬০ হেক্টর আমন এবং ৭৫০ হেক্টর শাকসবজি বন্যায় তলিয়ে গেছে। পানির চাপ বাড়তে থাকলে আরো নিমজ্জিত হবে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, বন্যা কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য স্কুল-কলেজ খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের মেডিকেল টিম গঠন এবং সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও দূর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও অন্যান্য প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, মান্দা উপজেলার কসবা, নূরুল্লাবাদ ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বাঁধের অন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে তদারকি করছেন পাউবোর লোকজন ও স্থানীয়রা। বাঁধ টিকিয়ে রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে।
নওগাঁর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (অতিরিক্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। আগামীকাল থেকে বন্যার পানি কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড