• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বপ্ন পূরণ হলো না ওদের

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

১৬ জুলাই ২০১৯, ২২:৩১
নববধূ
নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় স্বপ্ন রুপ নেয় বেদনায় (ছবি- দৈনিক অধিকার)

একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দিয়ে নববধূ ঘরে আনবে। বছর ঘুরে নাতি-নাতনির মুখ দেখবে। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে হেসে খেলে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে। এমন স্বপ্ন নিয়েই সিরাজগঞ্জ শহরের কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ও স্ত্রী ঝর্না বেগম নিজেদের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে ছেলেকে বিয়ে করান। নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা তাদের স্বপ্ন রুপ নেয় বেদনায়। সোমবার সন্ধ্যায় উল্লাপাড়ায় ট্রেনের সাথে মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত রাজনের বাবা-মা আবেগ আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছেন আর শোকে কাঁদছিলেন।

শুধু তার ছেলে আর নববধুই নয় দুর্ঘটনায় তাদের সাথে আরো নয়জন স্বজন মারা যায়। একমাত্র ছেলের বিয়েতে এসে নয় স্বজনের জনের মৃত্যু শোককে যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের। শোকে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তারা। কিছুতেই এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন বাড়ি গেলে সদ্য বিবাহিত বর রাজন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিস্তব্ধ শোকাবহ পরিবেশ। চোখের পানি ঠেকাতে পারছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত নারী পুরুষ। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছেই। শুধু কান্দাপাড়া নয় আশপাশের গ্রামগুলো থেকেও শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ। ওই বাড়িতে এসে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখে অজান্তেই চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অনেকের।

প্রতিবেশীরা বলেন, আলতাফ হোসেন একজন গরুর ব্যবসায়ী। তার ছেলে রাজন টুইস্টিং মিলের শ্রমিক। বড় মেয়ে স্বর্ণা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে রুপা লেখাপড়া করছে। বাপ-বেটা মিলে সংসারটা ভালোই চালাচ্ছিলেন।

নিহতের রাজনের স্বজন অনিক, এনামুল ও বোন রুপা জানান, এক সপ্তাহ আগে উল্লাপাড়া পৌর শহরের এনায়েতপুর গুচ্ছ গ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের (২১) সঙ্গে বিয়ে। ভাইয়ের বিয়ের জন্য সোমবার দিনক্ষণ ঠিক হয়। সে মোতাবেক ভাই ও আত্মীয়স্বজন মিলে দুটো মাইক্রোবাস নিয়ে কনের বাড়িতে যাই। উৎসবমুখর পরিবেশে বর-কনে কবুল পাঠ করে একে অপরকে জীবনসঙ্গী (স্বামী-স্ত্রী) করে গ্রহণ করে নেন। পৌনে ৭ টার দিকে বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দেওয়া হয় নববধূ নিয়ে রওনা দেয়া হয়েছে।

রাজন ও সুমাইয়ার জন্য বাসরঘর সাজানো হয়েছিল। নতুন জীবন শুরুর স্বপ্নে বিভোর ছিল দুজন। কিন্তু ভাই-ভাবীর সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় শুধু নব-দম্পত্তি নয় তাদের আরো নয়জনের তরতাজা প্রাণ হারায়। নব-দম্পত্তির সাথে নয়জনের আগামী দিনের চলার স্বপ্ন একেবারে শেষ হয়ে যায়।

নিহত নবদম্পতি (ছবি- সংগৃহীত)

অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকালে নিহতের স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় সকালে জিআরপি পুলিশ লাশগুলো পরিবারের লোকের কাছে হস্তান্তর করেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার থেকে দুপুর (বাদযোহর) পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ পৌর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, রামগাঁতি, কালিয়া হরিপুর, সয়াধানগড়া, দিয়ার ধানগড়া ঈদগাহ ও এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের ঘাটিনা ঈদগাহ মাঠ ও রায়গঞ্জের উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামে পৃথকপৃথকভাবে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এ দুর্ঘটনায় আরও যারা প্রাণ হারান তারা হলেন- রাজনের মামা শামীম হোসেনের একমাত্র ছেলে বায়েজিদ ওরফে আলিফ (৯), রাজনের দুসম্পর্কের দাদা কাজিপুরা গ্রামের ভাষান শেখ (৫০), তার ফুপুর শ্বশুর সদর উপজেলার রামগাঁতী গ্রামের আব্দুস সামাদ (৪৫), সামাদের ছেলে শফিউল ওরফে শাকিল (১৯), ধর্ম বোনের স্বামী সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার দিয়ার ধানগড়া মহল্লার আলতাফ হোসেনের ছেলে শরিফ হোসেন (৩২), চাচাতো ভগ্নিপতি রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে খোকন (২৪)। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন রাজনের আপন ছোট বোন স্বর্ণা খাতুনের স্বামী সুমন (৩০)। নিহত বাকিরা হলেন- মাইক্রোবাস চালক নুর আলম স্বাধীন (৫৫) ও তার সহকারি আহাদ আলী (৪৫)।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড