সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ
পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিনই যমুনার ভাঙনে বসতভিটা-ফসলি জমি বিলীন হয়ে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে সিরাজগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। মাথাগোঁজার মতো এক টুকরো জমি না থাকায় ভাঙন কবলিতরা খোলা আকাশ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না।
ভাঙন কবলিতের অভিযোগ, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা জন প্রতিনিধি বা প্রশাসন সামান্য সহযোগিতাও করছে না। জেলা প্রশাসন ও পাউবোকে জানালে তারা শুধু ব্যবস্থা নেবে- এমন আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। এ অবস্থায় ভাঙন কবলিতরা বলছে, এখন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার কেউ নেই!
জানা যায়, গত চার মাস ধরে যমুনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্তমানে যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরো তীব্র হয়েছে। সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার পানি রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর উপজেলার খুদবান্ধি থেকে শুভগাছা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
এতে একমাসের ব্যবধানে দেড়শতাধিক বসতভিটা, গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় এলাকার আট থেকে দশটি গ্রাম হুমকির মুখে রয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রতিদিনই বসতভিটা-ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।
যমুনার অব্যাহত ভাঙনে বসত-ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এদিকে চৌহালীর খাসপুকুরিয়া পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ফেলে ৫শ মিটার এলাকা সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও গত পরশু জিওব্যাগসহ ৫০ মিটার ধসে গেছে।
শাহজাদপুরের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাউতারা বাঁধ ভেঙে গেছে। শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় চারটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় দুজন ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতারা প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাওয়াকোলা ও হাট বয়ড়া গ্রামের দুই শতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জায়গা না থাকায় ঘরগুলো স্তূপ করে রেখে খোলা আকাশ বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ অবস্থায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ যমুনা ভাঙনরোধ এবং সহায়তার জন্য প্রশাসন ও পাউবোকে জানালো হলেও গত এক মাস ধরে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
এনায়েতপুর গ্রামের আড়কান্দি গ্রামের জলেবার, সমেশ, চান্দু, বরকত, শুকুর, আবুল ও আলেয়া খাতুন জানান, পৈত্রিক বসতভিটা-জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেটিও চলে গেল। পানি উন্নয়ন দেখেও না দেখার ভান করছে। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কেউ ভাঙনে দিশেহারা দরিদ্র এসব মানুষের খোঁজ নিতেও আসেননি। এখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার নেই।
প্রতিদিনই যমুনার ভাঙনে বসতভিটা-ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে (ছবি দৈনিক অধিকার)
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বাসিন্দরা জানান, দুমাসে প্রায় দুশতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। একদিকে পানি বৃদ্ধি অন্যদিকে তীর ঘেষে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন চোখের সামনে ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। তাদের জানালে শুধু বলে দেখছি, দেখব-ব্যবস্থা নেব। গত একমাস ধরে একথা বলেও ডিসি-ইউএনও সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছি।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার রায়হান ও সহকারী কমিশনার ভূমি আনিছুর রহমান জানান, বালু ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট মহল ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করায় জনবসতি হুমকির পড়লে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি টাকার ব্যয়ে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হবে। এছাড়াও কাজিপুর ও এনায়েতপুরে স্থায়ী সংরক্ষণ বাঁধের জন্য ১২শ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো পাস হবার পর শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড