হারুন আনসারী, ফরিদপুর
ফরিদপুর জেলায় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি ফার্মেসিকে ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে প্রায় শতাধিক লাইসেন্স নীতিমালা না মেনেই ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব লাইসেন্স অবৈধ উপায়ে ইস্যু করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ পথে ইস্যুকৃত এসব লাইসেন্সের মাধ্যমে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। যারা শুধুমাত্র দোকানে ওষুধই বিক্রি করছেন না বরং চিকিৎসাবিদ্যা না থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র ও অসচেতন মানুষকে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের বিবরণ শুনেই ওষুধও দিচ্ছেন। কার্যত এসব ওষুধের দোকানই হয়ে উঠেছে একেকটি ডাক্তারের চেম্বার!
নিয়ম অনুযায়ী কোনো ওষুধের দোকান তথা ফার্মেসি করার জন্য ড্রাগ লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। আর এই ড্রাগ লাইসেন্স তিনিই পাবেন যার ফার্মাসিস্টের ট্রেনিং ও সনদ রয়েছে। দুই বছর মেয়াদী এ ড্রাগ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এজন্য পৌরসভার মধ্যে তিন হাজার টাকা ও পৌরসভার বাইরে গ্রাম এলাকার জন্য ১ হাজার ৫শ টাকা ফি বাবদ চালান কেটে জমা দিতে হয়। এরপর দুবছর অন্তর এই লাইসেন্স নবায়ন করাতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য ফার্মাসিস্টের এই শর্তটি সঠিকভাবে অনেকেই পূরণ করেন না। অনেকে ছয় মাস মেয়াদী ফার্মাসিস্ট কোর্স সম্পন্ন করে ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহের পর অন্যকে দিয়ে ওষুধের ব্যবসা পরিচালনা করেন। আর এভাবে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে মোটা অংকের ঘুষ বিনিময়। ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে শতাধিক অবৈধ লাইসেন্স দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় ঘুষ না দিলে সব শর্ত পূরণ করার পরেও লাইসেন্স ইস্যু করতে গড়িমসি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফরিদপুর জেলায় এপর্যন্ত ২০৩৯টি ড্রাগ লাইসেন্স ইস্যু করা আছে। যার মধ্যে ফরিদপুর সদরেই রয়েছে ৭০৯টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব লাইসেন্স টাকার বিনিময়ে হয়েছে সেসব দোকানের মালিকেরা ফার্মাসিস্ট নয়। তারা ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে অন্য কারো নামে লাইসেন্স সংগ্রহ করে গোপনে ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজের নামে করে নিয়েছে। এ প্রক্রিয়াতেই চলছে অধিকাংশ ওষুধের দোকানের ব্যবসা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ের এক অফিস সহকারী সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ড্রাগ লাইসেন্স সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার সমাধান করে থাকেন।
ফরিদপুর ড্রাগ অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল আলম চঞ্চল বলেন, ওষুধের বিষয়ে যার কোনো জ্ঞান নেই, সেই ব্যক্তি যদি এ ব্যবসায় প্রবেশ করে তাহলে সাধারণ মানুষেরও ক্ষতি আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও তাহলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ফরিদপুরের ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ফরিদপুরে কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয় না। অফিসের কেউ এমন কাজে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফার্মাসিস্ট না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক দোকানে ফার্মাসিস্ট নেই। তারা অন্য কোনো ফার্মাসিস্টের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আমাদের লোকবল সংকট থাকায় সব সময় সব বিষয়ে তদারকির সুযোগ হয় না।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড