শফিউল করিম শফিক, রংপুর
নগরীতে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় এবং যেটুকু ব্যবস্থা আছে সেটাও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় ছয় দিনের টানা বর্ষণে উত্তরের বিভাগীয় শহর রংপুর এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। নগরীর অন্তত ১৩০টি পাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নজীরবিহীন জলাবদ্ধতা। এছাড়া দখল হয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী খাল ও কেডি ক্যানেল উপচে পড়ে দুইপাড়ের বাসাবাড়িতে ঢুকছে মলমূত্রের ময়লা পানি। এতে দুর্বিসহ দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
সরজেমিনে দেখা গেছে, অবিরাম বর্ষণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কামারপাড়া, আদর্শপাড়া, মুলাটোল, গনেশপুর, বাবু খাঁ, গুড়াতিপাড়া,মিস্ত্রিপাড়া, কেরানীপাড়া, পাশাড়ীপাড়া. ট্রেক্সটাইলস, সাতগাড়া, রামপুড়া, পাবর্তীপুর, নিসবেতগঞ্জ, পরিজাবাদ, ডাঙ্গিরপাড়া, দোলাপাড়া, বানিয়াপাড়া, দেওডোবা, পাঠানপাড়া, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, দর্শনা, আক্কেলপুর, বিদোনপুর, ধর্মদাসপুর, তামপাট, রঘু, লালবাগ, কারমাইকেল কলেজ, পার্কের মোড়, আশরতরপুর, কলেজপাড়া, খামাপাড়া, সিটি মেয়রের বাড়ির সামনে, আলমনগর, বাবুপাড়া, স্টেশন এলাকা, রবার্টসন্সগঞ্জ, তাঁতিপাড়া, তাজহাট গলাকাটা মোড়, বৈরাগি পাড়া ও উত্তম হাজিরহাটসহ নগরীর অন্তত ১৩০টি পাড়াসহ বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে সৃষ্টি হয়েছে নজীরবিহীন জলাবদ্ধতা।
এতে পানিবন্দি পড়েছে নগরীর অন্তত ১৮ হাজার পরিবার। এছাড়া তলিয়ে গেছে, পাশবর্তী এলাকার আমনসহ শাকসবজির ক্ষেত। অনেক মানুষ পাশবর্তী স্কুলে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও মহানগরীর স্টেশন রোড, কলেজ রোড, জিএল রায় রোড, সেন্ট্রাল রোড, কাচারী বাজার, নিউ সেনপাড়া, গ্রান্ড হোটেল মোড়, সালেক পাম্প, জাহাজ কোম্পানি মোড়ম পায়রা চত্বর, কোতয়ালী থানার সামন, জীবন বীমা মোড়, খামারপাড়া, লালবাগ কারমাইকেল কলেজ মোড়, টাউন হলের সামনে, বাস টার্মিনাল এলাকার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের সামনেসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কগুলোতে পানি উঠে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী খালের দুই পাড়ের কেরানিপাড়া, চৌরাস্তা মোড় ধাপ কটকি পাড়া, সেনপাড়া, শাপলা চত্বর, মুলাটোল, বৈরাগীপাড়া, মাহিগঞ্জ, জুম্মাপাড়া, লিচু বাগান এলাকা এবং কেডিক্যানেলের মেডিকেলের পাশ দিয়ে চিকলী হুনমানতলা হয়ে মাহিগঞ্জে পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে খাল দখল করে বসতবাড়ি হওয়ার কারণেই বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। ফলে পানি উপচে পড়ছে খালের দুই পাশে। এতে মলমূত্রের ময়লা পানি ঢুকে পড়েছে আশেপাশের বসত-বাড়িতে।
অন্যদিকে নগরীতে এমনিতে ভঙ্গুর ড্রেনেজ ব্যবস্থা তার ওপর ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অনেক জায়গায় ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। গত মেয়রের আমলে যে ড্রেনের কাজ করা হয়েছে সেগুলোর নিচে এখনও রয়ে গেছে বাঁশসহ নির্মাণ সামগ্রী ফলে। ফলে ড্রেনগুলো দিয়ে পানি বেরতে পারছে না। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ডিউটি পর্যবেক্ষক ফজলুল হক শুক্রবার দুপুরে দৈনিক অধিকারকে জানান, গত রোববার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৯১ দশমিক ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এরমধ্যে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ০৪ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার ৫৮ পয়েন্ট ০৬ মিলিমিটার, বুধবার ১০০ দশমিক ১৬ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৩৮ মিলিমিটার, সোমবার ৪০ দশমিক ৮ মিলিমিটার, রোববার ৩৪ দশমিক ০৪।
রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দৈনিক অধিকারকে বলেন, অবিরাম বর্ষণে নগরীর বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোসহ মূল নগরীরর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন। এজন্য আমি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থী। বর্তমানে নগরীতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ড্রেন আছে। কিন্তু শ্যামাসুন্দরী ও কেডি ক্যানেল দিয়েই নগরীর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু খাল দুটি ভরাট ও অবৈধ দখল হওয়ায় নগরীর পানি নিষ্কাশন ঠিক মতো হচ্ছে না। ধীরগতিতে পানি নিষ্কাশন হওয়ায় জলবদ্ধতায় নগরবাসী অসুবিধায় পড়েছেন। এই দুটি খাল খননের জন্য আমরা প্রকল্প তৈরি করছি। সরকারের ইতিবাচক হস্তক্ষেপ এজন্য জরুরি।
২০১২ সালে ২০ ডিসেম্বর রংপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে ৫০ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে আরও ১৮টি ওয়ার্ড বর্ধিত করে ২০৩.৬৩ বর্গকিলোমিটার বিশাল সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর এই নগরী উন্নয়নে সুষম সুবিধা নিশ্চিত করেনি সরকার।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড