কক্সবাজার প্রতিনিধি
ট্রলারডুবির পর প্রায় সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসছিলেন ভারতীয় এক জেলে। ভাসতে ভাসতে নিজের অজান্তেই চলে আসেন বাংলাদেশের সাগর সীমানায়। বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি জাহাজের নাবিকদের নজরে আসে সাগরে কেউ ভাসছে। এরপর নাবিকরা ওই জেলেকে উদ্ধার করেন। বাংলাদেশের সহায়তায় নতুন জীবন পায় প্রতিবেশী দেশের নাগরিক।
বুধবার (১০ জুলাই) এমভি জাওয়াদের কুতুবদিয়া অবস্থান করার সময় জাহাজের দলের সদস্যরা একটি লোককে সাগরে ভেসে থাকতে দেখে জাহাজের মাস্টারকে জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ নেভি ও পোর্টকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানান। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে নেভি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা দ্রুত আসতে পারবে না বলে জানায়।
এ অবস্থায় এমভি জাওয়াদের নাবিকরাই ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেন। মাস্টার তার দলকে দ্রুত লাইফ জ্যাকেট, বয়া সাগরে নিক্ষেপ করতে বলেন। ভেসে থাকা লোকটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় দল। জাহাজে তোলার সময় ওই লোক মুমূর্ষু ও আতঙ্কিত ছিলেন। মাস্টার উদ্ধার ব্যক্তিকে জাহাজে থাকা চিকিৎসক দিয়ে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় পোশাক দেন।
পরে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি জানান, তিনি জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক, বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়। তিনি পেশায় জেলে, নাম রবীন্দ্রনাথ দাস (কানু দাস)। ভারতের গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বৈরি আবহাওয়ায় ভারত সাগরের উপকূলে এক সপ্তাহ আগে তার মাছ ধরার ট্রলারটি ১০ জন সঙ্গীসহ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার এক সপ্তাহ ধরে তিনি সাগরেই ভাসছিলেন। ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশ সীমানা কুতুবদিয়ায় প্রবেশ করেন।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, এমভি জাওয়াদ আমদানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। কুতুবদিয়ায় সাগরে একটি কাঠ ধরে একজনকে ভাসতে দেখে জাহাজের নাবিকরা মাস্টারকে জানান। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।
নাবিকরা জানান, ভারতীয় নাগরিক কানু দাসকে উদ্ধার অভিযানটি ছিল অত্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর। যদিও জেলে কানু প্রথম দিকে সহজেই উদ্ধার হচ্ছিলেন। ওই জেলে প্রায় ৪০ মিনিট বাংলাদেশের নাবিকদের কাঁদিয়েছে। ভাসমান কানুকে উদ্ধার করতে নাবিকরা জ্যাকেট ও বয়া সাগরে ফেলেন। তিনি জ্যাকেট ধরতে পারলেও বয়াটি ধরতে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে উদ্ধারের আগেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর কেটে যায় প্রায় ৪০ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে জেলেকে দেখতে না পেয়ে নাবিকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখনো আশা ছাড়েননি নাবিকরা। জাহাজ সাগরে অবস্থান করতে থাকে। পরে আবারো তার দেখা মেলে। এরপর আবারও লাইফ বয়া ছুড়ে মারা হয়। তখন তিনি সেটি ধরতে সক্ষম হন। এরপর নাবিকরা তাকে জাহাজে তুলে নেন এবং উদ্ধারকারী সবাই উল্লাসে মেতে ওঠেন।
ওডি/এমআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড