লামা প্রতিনিধি, বান্দরবান
বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদীর পানি নেমে যাওয়ায় শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোররাতে প্লাবিত এলাকা থেকে দ্রুতগতিতে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফলে সকাল থেকে বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা মানুষগুলো। তবে পানি কমার পর রাস্তাঘাট ও ঘর-বাড়িগুলোতে জল-কাদায় ভরে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
এদিকে একদিন বন্ধ থাকার পর উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়ন ও সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বন্যায় ও পাহাড় ধসে ছয় শতাধিক ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফসল ও মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই দিবাগত রাত থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে পৌরসভা এলাকা, লামা সদর, রুপসীপাড়া, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকার ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারী কার্যালয় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়। এ সময় পাহাড় ধস ও বন্যার ক্ষতি এড়াতে পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ৫৫টি স্কুল ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রও ঘোষণা করা হয়। এতে আস্থায়ী এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শতাধিক পরিবারের কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নেয়। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সেনাবাহিনী আশ্রয় নেওয়া এসব পরিবারকে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি দিয়ে সহায়তা করেন।
এছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে ও পানিতে তলিয়ে থাকায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। লামা-আলীকদম, লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক ও লামা-রুপসীপাড়া সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল। পৌরসভা মেয়রের উদ্যোগে এসব পরিষ্কার করা হলে বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা পানি নেমে যাওয়ার পরপরই নিজ ঘর বাসযোগ্য করার জন্য কাজ শুরু করছেন। এছাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদের পুনরায় দোকানে মালামাল তুলতে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন নুনারঝিরি দুই পাড়ের বাসিন্দারা। ঝিরিটি অপরিকল্পিতভাবে খননের কারণে দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে, কিছুকিছু এলাকায় ভেঙেও পড়েছে। সেই সঙ্গে এ ঝিরির ওপর স্থাপিত বেশ কয়েকটি ব্রিজ, কালভার্টের নিচ ও পাশ থেকে মাটি সরে দেবে গেছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজটিও পানির স্রোতের টানে দেবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতেও ওই সকল এলাকার হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। এছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকটি মৎস্য খামার ও অর্ধশত একর ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান কৃষি বিভাগ। পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা দিপু রানী মল্লিক, আয়েশা বেগম, নুর জাহান ও মোজাম্মেল হোসনে বলেন, বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ভিটে থেকে পানি নেমেছে শুনে দেখতে এসেছেন তারা। এখন বাড়ি-ঘর মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করে তুলছেন তার। তারা বলেন, পানি আরও না কমলে ঘরে থাকা যাবে না। বন্যা পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতির সত্যতা নিশ্চিত করে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানান, আশ্রিতরা ঘরে ফিরে গেছে। তবে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রাথমিকভাবে পৌরসভা এলাকার ৫শ ঘর-বাড়ি, দেড় শতাধিক দোকানপাট ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। একই সময় বিভিন্ন স্থানে ৮০টির মত বসতঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিয়েছে। এ সময় কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলায় ঘরবাড়ী, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, সবজির ক্ষেত ও মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ওই ইউএনও।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড