কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোতে। ইতোমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, হাতিয়া, চিলমারী ও নয়ারহাট এলাকায় চার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তিস্তার তীরবর্তী এলাকার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। তবে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা এলাকায় গত এক সপ্তাহে ১২০টি বাড়ি-ঘর বিলিন হয়ে গেছে।
এ দিকে স্কুল, বাজার, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরের ভাঙন ঠেকাতে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও তীব্র ভাঙন ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে দেখা যায় নদের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পানি বাড়ছে তিস্তা ও দুধকুমার নদীতেও। এ দিকে কুড়িগ্রাম সদরের চর যাত্রাপুরের গারুহারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়া কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি (ছবি : দৈনিক অধিকার)
সরেজমিনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার ফলে চতুরা ও রামহরি মৌজায় প্রায় ৫০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে তীব্র ভাঙনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১২০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ভাঙন ঠেকাতে কালিরহাট বাজার এলাকায় স্থানীয় এমপির উদ্যোগে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এ দিকে তীব্র ভাঙানে ইতোমধ্যেই বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের কবলে রয়েছে কালিহাট বাজার, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনার মুখা মাদ্রাসা, পাইকের পাড়া মাদ্রাসাসহ আরও দুইটি মসজিদ ও তিনটি মন্দির।
এ সময় চতুরা এলাকার নরেন্দ্র চন্দ্রের ছেলের বউ লক্ষ্মী রানীকে তার চার বছরের কন্যা শ্রাবনীকে কোলে নিয়ে উদাস চোখে চেয়ে থাকতে দেখা যায় তিস্তা নদীর দিকে। এই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া রুপালী জানান, ‘নদী হামার সউগ (আমাদের সব) খায়া নিয়া গেইছে (ভেঙে নিয়ে গেছে)। এমরা (এ বাড়ির লোকেরা) হামাকগুলাক বাড়িত ঠাঁই দিছে (আমাদের আশ্রয় দিয়েছে)। গত দুই বছরে কাঁইয়ো হামাক (কেউ আমাদের) সাহায্য করে নাই।’
ভোগান্তির মধ্যে থাকা চতুরা গ্রামের লোকজন জানান, পূর্বে নরেন চন্দ্রের বাড়ি থেকে পশ্চিমে তোফাজ্জলের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয়েছে ১২০টি পরিবার।
সন্তনকে নিয়ে নির্বাক চোখে বন্যা ও ভাঙনের তাণ্ডব দেখছেন লক্ষ্মী রানী (ছবি : দৈনিক অধিকার)
ভাঙন কবলিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত কয়েক বছরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের অর্ধেক অংশই নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনো দুই হাজার পরিবার মেইনল্যান্ডে বসবাস করছে। সরকার যদি দ্রুত সময়ে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করে তাহলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যেই বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেড়শো টন চাল ও তিন লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
এ দিকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ জানান, ভাঙন কবলিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরহাট বাজার এলাকায় পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড