গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ লেভেল ক্রসিং দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বাজারে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এবং কাওরাইদ ও গয়েশপুর এ দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কে কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সিগনাল বার ও গেইটম্যান নেই। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে কাওরাইদ ও গয়েশপুর এই দুই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সিগনাল বার ও গেইটম্যানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মানববন্ধনসহ নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পরে গত তিন বছর আগে কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত হয়। এখানে মাঝে মাঝে লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে যাচ্ছে মালবাহী ট্রাক, ট্রলিসহ নানা ধরনের লোড গাড়ি। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এড়াতে মাঝে মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন সিগনাল দিয়ে থামিয়ে সরানো হচ্ছে আটকে যাওয়া যানবাহন।
তাছাড়া রেল লাইনের ধার ঘেঁষে সপ্তাহে দুই দিন বাজার বসে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। ট্রেন চলাচলের সময় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রেল লাইনের উপর ভাসমান অবস্থায় বেচাকেনা করছেন আপনাদের ভয় করে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে কাওরাইদ বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ট্রেন আসলে আমরা দোকান ছেড়ে চলে যাই, ট্রেন চলে যাওয়ার পরে আমরা আবার দোকানে বসে বেচাকেনা করি।’
কাওরাইদ বেলদিয়া গ্রামের শারফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা শত বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি একজন গেইটম্যান ও সিগনাল বারের জন্য। গত ২০ জুন কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেন দাঁড়ানো দেখে সাইকেল নিয়ে লেভেল ক্রসিং দিয়ে পার হতে গেলে হঠাৎ দেখেন অন্য একটি ট্রেন দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। এ সময় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ‘
কাওরাইদ ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, প্রাইমারি স্কুলে প্রায় ৮শ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাজারের পশ্চিম পাশ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করে।
কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান নাজমুল বলেন, বেশ কিছুদিন আগে তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লেভেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে। একই সাথে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করছে। কোমলমতি এসব শিশুদের কাওরাইদ রেল স্টেশনের লেভেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।
কাওরাইদ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ লেভেল ক্রসিংয়ে একবার ট্রেনে কাটা পড়ে ছাত্রী নিহত হয়েছে। কাওরাইদ বাজারে লেভেল ক্রসিংয়ে সিগনাল বার ও গেইটম্যানের প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী আগস্টের আগে এ সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ডালি বলেন, এখানকার সব মানুষ লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য দিনের পর দিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। লেভেলের আশেপাশে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে এখান দিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসা যাওয়া করে। যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড