আমতলী প্রতিনিধি, বরগুনা
বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলের গ্রাম্য মানুষের ঐতিহ্যময় হোগল শিল্পের প্রতি এখন আর তেমন কদর নেই। কালের বিবর্তনে এই শিল্প বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। এক সময় গ্রামের প্রত্যেক ঘরেই হোগল শিল্প দেখা যেতো। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে মক্তব, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার হতো হোগল পাতার তৈরি শীতল পাটি। বিশেষ করে গ্রামের সকল পেশার মানুষ খাওয়া, নামাজ ও ঘুমানোর কাজে এই পাটির ব্যবহার হতো সব থেকে বেশি। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় তীব্র গরমে মানুষ হোগল পাতার হাতপাখা ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী।
কিছু জনগোষ্ঠী খণ্ডকালীন আয়ের উৎস হিসাবে হোগল পাতার কুটির শিল্পের ওপর নির্ভর করত। তারা নদী, খাল ও ঝিলের কিনারা থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মানো এই জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবনযাপন করত। কেউ কেউ এই বাজার থেকে এই জলজ উদ্ভিদ অর্থাৎ হোগল পাতা কিনে গ্রামীণ কুঁড়ে ঘরের বেড়া, ফসলের ক্ষেতে বেড়া, ঘরের ছাউনি ও ফসল রাখার টুকরি কাজে ব্যবহার করত। আবার গ্রামের নারীরা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে কোমল ও নরম পাতা আলাদা করে তা দিয়ে শীতল পাটি, হাতপাখা, নামাজের মাদুর, কুশন, ঝুড়ি, টুপি ও টুকরিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারে বিক্রি করত। এসব পণ্য শহরের অনেক মানুষকেও ব্যবহার করতে দেখা যেত।
হোগল পাতা নামক এই জলজ উদ্ভিদ উপকূলীয় অঞ্চলের এটেঁল মাটিতে জন্মে। নদীর, খাল ও ঝিলের কূলে হালকা জলাবদ্ধ স্থানে বেশি দেখা যায়। লম্বায় প্রায় ৫ থেকে ১২ ফুট হয়। যখন ১ থেকে ২ ইঞ্চি সারি সারি পাতার সমন্বয়ে বেড়ে ওঠে তখন সৃষ্টি হয় মনোমুগ্ধকর সবুজ পরিবেশ। বেড়ে ওঠার কিছুদিন পর এই জলজ উদ্ভিদে ফুলের জন্ম হয়। আর এই ফুল থেকে তৈরি হয় এক প্রকার পাউডার যা পুষ্টিকর সুস্বাদু খাবারের উপাদান হিসোবে ব্যবহৃত হয়।
কৃষকরা জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে জন্মে থাকে এই উদ্ভিদ। নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে এই পাতা ব্যবহার ছাড়াও এর ফুল থেকে ফুল সংগ্রহ করে তা দিয়ে পাউডার তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা যায়। হোগল ফুলের পাউডারের প্রতি কেজির মূল্য প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এটি চকচকে হলুদ রঙের হয়। এ পাউডারটি খুব পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার। হোগলের গুঁড়া দিয়ে এখানে জনপ্রিয় একটি কেক তৈরি হয়।
অথচ বর্তমানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য বাজারে আসায় ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্রতারণায় ধ্বংস এই শিল্প। স্বল্প আয়ের মানুষের ধারণা, সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হলে সারাদেশে হোগলা পাতা ও এর গুঁড়া বাজারজাত করা সম্ভব। তাছাড়া হোগল শিল্পের তৈরি নানা পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেও দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড