• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের ওপরেই চলছে মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ 

  রাজশাহী প্রতিনিধি

১০ জুলাই ২০১৯, ১৭:০৪
মাদ্রাসার ভবন
মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের জমি ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

রাজশাহীর পবা উপজেলায় তিন মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ১৯টি কবরের ওপর মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠে, জমিটি দখলে রাখতে উপজেলার খোলাবোনা দাখিল ও আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পারিবারিক কবরস্থানের ওপর এই ভবন নির্মাণ করছে। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি ভবন নির্মাণের জমিতে কোনো কবর নেই।

এ নিয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তারা আদালতে মামলাও করেছেন। মামলা চলমান অবস্থায় সম্প্রতি আবার কাজ শুরু করা হয়। পরে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ গেলে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

গত সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোলাবোনা এলাকায় পাশাপাশি দুটি মাদ্রাসা। একটির নাম খোলাবোনা ফোরকানিয়া ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। আরেকটি খোলাবোনা দাখিল ও আলীম মাদ্রাসা। দুই মাদ্রাসার মাঝে একটি সীমানা প্রাচীর। নতুন ভবনের জন্য পিলার তুলেছে আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, যে স্থানে ভবন নির্মাণের পিলার উঠানো হয়েছে সেটা আসলে কবরস্থান। এখানে মুক্তিযোদ্ধা তিন ভাইয়ের কবর রয়েছে। তারা হলেন- আনারুল ইসলাম, আসাদ আলী ও শাহজাহান আলী। জমিটি এখন ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে রেকর্ড হয়ে আছে। কিন্তু জমিটি জোর করে দখলে নিতে কবরস্থানের ওপরেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি স্বীকার করে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূরে আলম (৪০) জানান, জমিটির মালিক ছিলেন প্রয়াত তিন মুক্তিযোদ্ধার চাচা জকিম উদ্দিন মণ্ডল। এখানে তার মোট ৩৩ শতক জমি ছিল। তার মৃত্যুর পর কয়েকবছর আগে জমির ১০ জন ওয়ারিশ ২০ শতক জমি ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে দান করেন। কিন্তু পরে তারা দেখেন অনেক আগেই ভুল করে ওই মাদ্রাসার নামে ১০ শতক জমি রেকর্ড হয়ে গেছে। এখন ৩০ শতক জমিই রয়েছে ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে। বাকি তিন শতক আছে জকিম উদ্দিন মণ্ডলের ওয়ারিশদের। কিন্তু ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে ৩০ শতক জমি থাকলেও এই জমিতেই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে আলীম মাদ্রাসা।

প্রয়াত তিন মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্নে ওসমান গণি (৫৯) বলেন, তারা খুশি মনেই ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে ২০ শতক জমি দান করেন। কিন্তু পরে তারা দেখেন তাদের ১৯ জন আত্মীয়-স্বজনের কবরও একই মাদ্রাসার নামে রেকর্ড হয়ে আছে তখন রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করা হয়। এই মামলায় ফোরকানিয়া মাদ্রাসার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত আসার আগেই পাশের আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কবরস্থানটি দখল করে নিচ্ছে।

খোলাবোনা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকেই জমিটিতে কবরস্থান দেখে আসছি। সেখানে তিনজন মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। কিন্তু তাদের কবরের ওপর ভবন তোলাটা দুঃখজনক। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এটা মেনে নিতে পারছি না।

এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার সকালে খোলাবোনা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মিকাইল হোসেনকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। মঙ্গল ও বুধবার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে গত সোমবারই মাদ্রাসাটির কর্মচারী মিজানুর রহমান দাবি করেছিলেন, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকেই পর্যায়ক্রমে আলীম মাদ্রাসা হয়েছে। এই জমির রেকর্ড তাদের মাদ্রাসার নামে আছে। তাই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে এখানে কোন কবর নেই বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে খোলাবোনা ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জিয়াউল করিম বলেন, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা পরিচালিত হয় কওমী মাদ্রাসার অংশ হিসেবে। আর দাখিল-আলীম পরিচালিত হয় শিক্ষাবোর্ড থেকে। দুটি ভিন্ন মাদ্রাসা। একটি কখনও আরেকটির অংশ হতে পারে না। কিন্তু এই ১০ শতকই নয়, ফোরকানিয়া মাদ্রাসার আরও সম্পত্তির দখল নিতে আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দুটিকে একই প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড