• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে নেই সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিন

  রিয়াদ হোসাইন, মুন্সীগঞ্জ

১০ জুলাই ২০১৯, ১৩:২২
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল

প্রচণ্ড গরম ও বর্ষা মৌসুম হওয়ার ফলে মুন্সীগঞ্জে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষের বসবাস। জেলায় একটি জেনারেল হাসপাতালসহ ৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। দুঃখজনক হলেও জেলার কোথাও সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিন ‘অ্যান্টিভেনম’ নেই। ফলে সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে জেলাবাসীকে আতঙ্কে থাকতে হয়। চলতি বছর সাপে কাটায় শিশু ও ফটো সাংবাদিকসহ মোট তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে প্রয়োজনের তুলনায় সাপের ভ্যাকসিন ‘অ্যান্টিভেনম’ অপ্রতুল্য। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ও লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ১০টি ইনজেকশন আছে। তাছাড়া বাকি ৪টি উপজেলা (শ্রীনগর , সিরাজদিখান, টংগিবাড়ি ও গজারিয়া) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন নেই। এমনকি ভ্যাকসিন পুশ করার জন্য যে অভিজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন তাও নেই।

এছাড়া ওষুধের দোকানগুলোতে এ ভ্যাকসিন রাখা হয় না। সাপে কাটা রোগীর সেনসিভিটি টেস্ট করতে হয় যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও অ্যান্টিভেনম পুশ করার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। যা মেইনটেইনের কোনো ব্যবস্থা নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে। অর্থাৎ লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় ইনজেকশন দেয়ার পর রোগীর শরীরে যে ইফেক্ট পড়বে তা মোকাবিলা করার সাধ্য উপজেলায় ও জেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। যার কারণে সাপে কাটা রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করতে হয়। এছাড়াও গ্রামের মানুষরা সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে এখনো সচেতন না। যার কারণে তারা এখনও রোগীদের ওঝা বা কবিরাজ দিয়ে ঝাঁড়ফুক করে থাকে।

টংগিবাড়ীর মো. মোজাফফর জানান, কয়েক মাস আগে উপজেলার ফটো সাংবাদিক তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে সে সময় তাকে সাপ কামড় দেয়। টংগিবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার্ড করে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।

দিঘীরপাড়ের মো.সুজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সময় এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখা যায়। এতে মানুষ আতঙ্কিত রয়েছে আর মুন্সীগঞ্জে সাপের কামড় দেওয়া রোগীদের কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

টংগিবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবুল বাশার জানান, দীর্ঘদিন থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। গত কয়েক মাস আগে এক ফটো সাংবাদিক সাপে কাটায় আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন । তাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। পরবর্তীতে সেখানে চারদিন আইসিইউতে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।

লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হুমায়ন কবির জানান, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি ভ্যাকসিন ‘আ্যান্টিভেনম’ আছে। তবে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আর ভ্যাকসিনের ডেটফেল হওয়ার কারণে সরবরাহ কম।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বদিউজ্জামান বলেন, সাপের ভ্যাকসিন উপজেলা পর্যায় পাওয়া যায় না। জেলায় সাপের ভ্যাকসিনের জন্য বলা হয়েছে। কিছুদিন আগে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই উপজেলায়।

গজারিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে রেকর্ড অনুযায়ী এ বছর কোনো সাপে কাটা রোগী আসেনি। তবে আশেপাশে দুই–তিনজনকে সাপে কাটার ঘটনা ঘটেছে। সব রোগীকে ভ্যাকসিন ‘অ্যান্টিভেটম’ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। মুন্সীগঞ্জের স্টকে ভ্যাকসিন রয়েছে খুব শিগগিরই গজারিয়ায় ভ্যাকসিন আনা হবে।

শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেজাউল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন ইনজেকশন পুশ করলে রোগীর অবস্থা অবনতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সে সময় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আইসিইউতে ভর্তি রাখতে হয়। কিন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেরকম লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। তখন রোগীর আত্মীয়রা বলবে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলছে রোগীকে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার্ড করা হয় সাধারণত।

মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘অ্যান্টিভেনম’ সরবরাহ খুবই সীমিত এবং ব্যয়বহুল। আমাদের স্টকে এখন ১০ ইউনিট ভ্যাকসিন রয়েছে। আজ আরও ৫০ ইউনিট ভ্যাকসিনের জন্য বলা হয়েছে। সিরাজদিখান, শ্রীনগরে সাপে কাটা রোগীদের বেশির ভাগ ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। তাদের বলা হয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করার জন্য এখানে মোটামুটি সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও সাপে কাটা রোগীদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তারা দেরি করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। যার কারণে অনেক সময় রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। শিগগিরই এ বিষয়ে চিকিৎসকদের ট্রেনিং করতে ঢাকা পাঠানো হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হবে।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড