ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
সূর্যাপুরী আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা। এক সময় দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার আম ব্যবসায়ীরা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সূর্যাপুরী আমের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতো নিজেদের বাগানের চাষ করা সূর্যাপুরী আম। বালিয়াডাঙ্গীর সূর্যাপুরী আম, নাম শুনেই ক্রেতারা চোখ বন্ধ করে সেই আম ক্রয় করত।
কিন্তু গত বছরের সূর্যাপুরী আমের দামে ধস নামায় এবার এলাকার চিত্রটা ভিন্ন। দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলে ক্রেতা সঙ্কটে ভুগছে আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। বাজার গুলোতে আমের আমদানি লক্ষ্য করা গেলেও নেই ক্রেতাদের তেমন ভিড়।
জেলা ও উপজেলা শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি আম মৌসুমে জেলার বিভিন্ন আম বাজারে সূর্যাপুরী পাকা আম ৪০-৫০ টাকা কেজি এবং কাচা আম ৫০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ আম বিক্রি হয়েছিল পাকা ১০-১৫ টাকায় এবং কাঁচা ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। তবে বাগান গুলোতে আমের দাম আরও কম। আমের দর নিয়েও ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
জেলার কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁওয়ে সূর্যাপুরী আমের বাগান ছোট বড় মিলিয়ে এক হাজার ৫শ বাগান রয়েছে। দুই হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ সব বাগান থেকে জেলায় কমপক্ষে ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে চলতি বছরে।
গেল বছর সূর্যাপুরী আম নিয়ে ব্র্যান্ডিং করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আখাতারুজ্জামান। গত বছরের ২৫ জুন প্রথম বারের মত সূর্যাপুরী আম সংগ্রহ অভিযান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও অনুষ্ঠানের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।
জেলায় এ বছর বারী-৪, আম্রপালি, ফজলী, ল্যাংড়া সূর্যাপুরী আমের উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই সূর্যাপুরী জাতের। এ আম খেতে সুস্বাদু, সুগন্ধযুক্ত, রসালো আর ছোট আটি জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
জেলার বড় আমজাবাজার রোডে ব্যাপক আমের আমদানি হতে দেখা গেলেও ক্রেতার ভিড় নেই তেমন। বিগত বছরগুলোতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমের চাহিদা থাকলেও এ বছর আমের চাহিদা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।
হঠাৎ করেই আমের বাজার ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। তারা জানান, বাগান পরিচর্যায় যে খরচ হয়েছে, আম বিক্রি করে তা তুলতেই হিমসিম খাচ্ছেন তারা। লাভের আশাতো অনেক দূরের কথা।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, এ বছর আমের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম একটু বেশি। তাই ক্রেতারও দেখা মিলছে কম। এ মোকামে দোকান প্রায় দেড়শ। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মোকাম শুরু করেছে। বেচাকেনা ভালো না হলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কাশুয়া গ্রামের আম চাষি জামাল উদ্দীন বলেন, বিদেশ থেকে এসে এ বছর ১০০ বিঘা জমিতে সূর্যাপুরী, বারি-৪, হিমসাগর জাতের আম চাষ করেছি। প্রতি মণ আম উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬শ টাকা। কিন্তু বর্তমানে আমের বাজার মূল্য ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা হলেও ক্রেতার সংখ্যা খুব কম।
অপর দিকে বাগান ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি একটি বাগান ছয় লাখ টাকায় কিনেছি। পরিচর্যাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় হয়েছে আরও তিন লাখ টাকা। সব মিলে এবার বাগানের ফলের দাম পড়েছে নয় লাখ টাকা। এবার আমের দাম তুলনামূলক বেশি থাকায় লাভের আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় ধান, গম, পাট ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ফলের উৎপাদনও হয়ে থাকে। ছোট বড় মিলে প্রায় আড়াই হাজার জমিতে ফলের চাষ হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা সেটি পুষিয়ে নিতে পারছেন।
এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধানের জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। ফলে ধান ও গমের পাশাপাশি ফল বিক্রি নগদ অর্থ হাতে পাচ্ছেন। এটা কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত আয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ জেলার মাটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ১৫০ ফিট উচ্চতায় হওয়ায় এ জেলার মাটি ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী।
উল্লেখ্য, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় সূর্যাপুরী আমগাছ অবস্থিত। এটির বয়স কমপক্ষে ২২০ বছর। বিশাল আকৃতির আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দুই বিঘা জমির উপর। মোটা মোটা ডালপালা বড় হয়ে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা গুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। এ গাছের চারা থেকে উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যাপুরী জাতের আম বাগান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড