• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

২০১৬ সালে শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা

ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন মা

  মদন প্রতিনিধি, নেত্রকোণা

০৭ জুলাই ২০১৯, ১৮:৫৬
শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা
ছেলে হারানোর শোকে কাতর আনছারুলের মা রাবেয়া খাতুন ও তার দুই ভাই, ইন্সেটে আনছারুল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ট্রাজেডির তিন বছর আজ রবিবার (৭ জুলাই)। ২০১৬ সালের এই দিনে দেশের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশ পথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনে তল্লাশি চৌকিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সময় জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেড, গুলি ও চাপাতির আঘাতে নেত্রকোণার মদনের পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল নিহত হন।

ছেলে হারানোর শোকে দুই চোখের পাতা আজও এক করতে পারছেন না আনছারুলের মা রাবেয়া খাতুন। আমার হুত (ছেলে) আমারে না বলছিল, মা আমি ঈদের নামাজ পড়েই বাড়ি আইব (আসবো), তিন বছর হয়ে গেল অহনও (এখনও) আইলনা (আসলো না)।

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠের কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক (২৭)। এ উপলক্ষে আজ রবিবার তার গ্রামের বাড়ি মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরিবারের পক্ষে আনছারুলের ছোট ভাই আইনুল হক সকলকে ওই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করার জন্য অনুরোধ জানান।

ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় মা রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে কথা হয় আনছারুলের। ঈদের ছুটি হয়েছে, ঈদগাহ মাঠের ডিউটির পর বাড়ি আসবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা হলো না। ওই দিন আসতে হলো লাশ হয়ে। শুধু মা রাবেয়া নয়, পুরো পরিবার এখন বেঁচে আছে আনছারুলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।

শনিবার (৬ জুলাই) গ্রামের বাড়িতে কথা হয় পুলিশ কনস্টেবল আনছারুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তারা জানান, আনছারুল নিঃসন্তান ছিলেন। তার স্ত্রী নূরন্নাহার এখন আর তাদের পরিবারে খুব একটা আসেন না বিশেষ কোনো কাজ ছাড়া।

রবিবার (৭ জুলাই) সকালে আনছারুলের বিষয়ে জানতে চাইলে মা রাবেয়া আক্তার বলেন, তিন বছর হয়ে গেল এখনও চোখের পাতা এক করতে পারি না, এই কারবালার মাঠ আমার জন্যই হয়েছে, আমার পুত (ছেলে) এক মাস রোজা রেখেছিল সে বলেছিল ঈদের ছুটি হয়েছে মা ,মাঠের ডিউটির পর আসব। এসে তোমার সাথেই খাইব। খাওয়া আর হলো না। আমার পুত (ছেলে) আসলো লাশ হয়ে।

আমার আনছারুলেই ছিল এই পরিবারের একমাত্র আয় রোজগারের উৎস। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সেই পরিবারের হাল ধরে। ভাগ্যক্রমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল (২৮ ডিসেম্বর ২০১৬) আমি বলতে হারি (পারি) নাই, আমার আর একটা পুত (ছেলে) আছে, তার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরির ব্যবস্থা করলে এই পরিবারটি বাইছে যাইত (বেঁচে যায়)।

তিনি বলেন, আমার পুতে (ছেলে) হাজার হাজার মানুষের জীবন বাচাইছে, প্রধানমন্ত্রী আমার এই হোলারে (ছেলেকে) একটা চাকরি দিয়ে কয়েক জনের জীবন বাচাক, এইডা আমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি থাকব। আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। অবশেষে পুলিশ সুপার সান্ত্বনা স্বরূপ আমার ছেলেকে আউট সোর্সিং এ পরিছন্ন কর্মী হিসেবে ১২ হাজার টাকায় একটি চাকরি দেন। যে টাকায় আমার সংসারের কিছুই হয় না। এ পদে চাকরি আমি লোকে মুখে বলতেও পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি ফাঁসি চাই। তিন বছর হয়ে গেলে এখন পর্যন্ত খুনিদের কোনো বিচার হলো না।

সে দিনের স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আর দেশ কাঁপানো বীভৎস ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় আনছারুলের পরিবারকে। এ ধরনের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আনছারুলের পরিবারের লোকজন।

আনছারুলের বিষয়ে মুঠোফোনে স্ত্রী নূরন্নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার সংসার জীবন উনার সঙ্গে নয়টি বছর কেটেছে, কোনদিন সংসারে ঝগড়া হয়নি। কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তিনি নিজের পরিবার নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকতেন।

নেত্রকোণার মদনে ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে দৌলতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন আনছারুল। ২৬ অক্টোবর ২০০৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। সফলভাবে ট্রেনিং শেষ করে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ডিএমপি, ঢাকা, আরআরএফ, সিলেট, মৌলভী বাজার এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। কর্ম জীবনে তিনি ১৪টি উত্তম পুরস্কারে ভূষিত হন।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড