• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঝুপড়ি ঘর দখলে নিতে বৃদ্ধা মাকে পেটালেন ছেলে

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

০৭ জুলাই ২০১৯, ১৬:৫৯
আহত
সেই বৃদ্ধা মাকে দেখতে হাসপাতালে যান জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের গলেহা ফুলপাড়া এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনয়িনের গলেহা ফুলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিকালে ভুক্তভোগী বৃদ্ধার মেজো ছেলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

অন্য ছেলের বাড়ি না যাওয়ায় বৃদ্ধা মা হাফেজা খাতুনকে তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), ফারুকের স্ত্রী ইনসানা (৩২) এবং নাতি হৃদয় (২১) মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ ছেলে এবং পাঁচ মেয়ের জননী হাফেজা খাতুন সবার বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলে এবং মেয়েরা মাকে তাদের বাড়ি নিতে চাইলেও স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে রাজি হননি তিনি। ছোট ছেলে ফারুক হোসেনের ঘর ঘেঁষে স্বামীর ভিটায় ঝুপড়ি ঘর করে একাই থাকেন হাফেজা। খাওয়া-দাওয়া করেন মেজো ছেলে শফিউল্লাহর বাড়িতে। তবে ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী ঝুপড়ি ঘরটি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধা মাকে মারপিটসহ নানাভাবে নির্যাতন করছেন।

এ দিকে রবিবার দুপুরে বৃদ্ধার শৌচাগারে যাওয়ার রাস্তায় আবর্জনা জড়ো করে রেখে দেন ফারুকের স্ত্রী ইনসানা বেগম। এতে বৃদ্ধা কষ্ট করে ওই আবর্জনা সরিয়ে নেন। এ নিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে রাগ করেন পুত্রবধূ। পরে শৌচাগারে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধার হাত থেকে পানি ভর্তি বদনা নিয়ে ভেঙে ফেলেন পুত্রবধূ। এক পর্যায়ে ছেলে ফারুকের উপস্থিতিতে স্ত্রী ইনসানা বৃদ্ধার বুকে ঘুষি মারেন। এ সময় বৃদ্ধার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ছেলে শফিউল্লাহ মাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা হাফিজা খাতুন বলেন, ১০-১২ দিন আগে নাতি হৃদয় আমার ঘরের বারান্দার চালা ভেঙে দেয়। এ সময় একটা বড় বাঁশ ভেঙে আমার মাথায় পড়ে। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না। ওষুধ এনে দেওয়ার কথা বললে ফারুক বলে থানায় যাও, তারা ওষুধ দেবে।

বৃদ্ধার মেজো ছেলে শফিউল্লাহ বলেন, বাবার ভিটেতে ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন মা। তিনি সেখান থেকে আসতে চান না। আমার বাড়িতে তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া করেন মা। এটা ফারুকের সহ্য হয়নি। মায়ের ঘর দখলে নিতে মাকে মারপিট ও নির্যাতন করছে ফারুক ও তার স্ত্রী। আমরা তাদের সঙ্গে ঝগড়া না করে আইনের আশ্রয় নিতে এসেছি।

এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছোট ছেলে অভিযুক্ত ফারুক হোসেন বলেন, আমি আমার মাকে কখনো মারধর করিনি। আমাদের বসতভিটের জমিজমা নিয়ে ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে। আদালতে মামলাও চলছে। ভাইরা আমার মাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। মাকে তারা যেভাবে শিখিয়ে দিচ্ছে সেভাবে মা কথা বলছেন।

কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ফারুক একটু উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির, এটা সবাই জানে। আমি ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ওসি আবু আক্কাছ আহমদ বলেন, আমি হাসপাতালে পুলিশ পাঠাচ্ছি। খোঁজখবর নিয়ে ওই বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খবর পেয়ে রবিবার বৃদ্ধা মাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে দেখতে যান পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় তাকে নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড