• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রতিশোধের ক্ষোভে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ

  যশোর প্রতিনিধি

০৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫০
যশোর
হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম

যশোর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে (৪৫) পিটিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। তাকে ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে শ্লীলতাহানির সাজানো অভিযোগে মারধর করে একই স্কুলের কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ইউসুফ হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘স্কুলে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা চলছে। বেলা ১টার দিকে স্কুলের শিক্ষক সহকর্মী ইউসুফকে গ্রামের তসলিম মিয়ার বাড়ি আটকে রাখা হয়েছে সংবাদ পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেন। প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের কথামতো আমি ও মতিয়ার রহমান নামে একজন শিক্ষক, ইউসুফকে দেখতে তসলিম মিয়ার বাড়ি যায়। সেখান থেকে বের হলে আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলামের লোকজন আমাকে মারধর করে।

এরপর তার কথামতো বিল্লাল রুবেলসহ ৭/৮ জন বাঁশের লাঠি দিয়ে আমাকে পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার মাথায় বাড়ি মারলে আমি পড়ে যাই। সেখান থেকে আমাকে একটি দোকানের ভিতর নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে আমার বৃদ্ধ পিতা হানিফ মিয়া ও ছোট ভাই ফারুক আমাকে বাঁচাতে গেলে চেয়ারম্যান শাহারুল আমার পিতাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় ও তার লোকজন ছোট ভাইকে মারধর করে।

এরপর আমাকে পাশের একটি সুপারি গাছে ছাগল বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরই মধ্যে স্কুলে পুলিশ আসলে পুলিশের সামনে আমাকে জোরপূর্বক অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই এসব কিছু করা হয়। আমাকে ও শিক্ষক ইউসুফকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমি পুলিশকে ঘটনা খুলে বললে তারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। আর শিক্ষক ইউসুফকে থানায় নিয়ে যায়।’

স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি খাতুনকে দিয়ে শিক্ষক ইউসুফের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দেওয়ার জন্য আঁখিসহ তার নানীকে শাহারুলের লোকজন কোতয়ালি থানায় নিয়ে যায়।

যশোর কোতয়ালি থানা হাজতে আটক শিক্ষক ইউসুফের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এর আগেও একবার ২০১০ সালে শিক্ষক জাহাঙ্গীরকে শাহারুল ও তার লোকজন মারধর করে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি রূঢ় কণ্ঠে বলেন, ঘটনার সময় আমি স্কুলে ছিলাম না। বাইরে ছিলাম। সকাল ১২টার দিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আপনার স্কুলে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না। আমি তাকে বলি আমি বাইরে ছিলাম কী হয়েছে জানি না খোঁজ নিচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে দেখি স্কুলের কোনো শিক্ষক কিছুই জানে না। স্কুলে এসে শুনি তসলিম মিয়ার বাড়িতে শিক্ষক ইউসুফ ক্ষমা চাইতে গেছে। অথচ বাড়ির লোকজনও জানেন না কী ঘটনা ঘটেছে স্কুলে। পরে বাড়ির লোকজন জানতে পারে তাদের নাতনি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আঁখিকে অংকে সুবিধা দেওয়ার কথা বলে শিক্ষক ইউসুফ স্কুলের সিঁড়ির নিচে ডেকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

ঘটনা শুনে তসলিম মিয়ার বাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষক ইউসুফকে মারধর করে তাদের বাড়ি আটকে রাখে। শিক্ষক মতিয়ার ও জাহাঙ্গীর আমাকে না বলে শিক্ষক ইউসুফকে দেখতে তসলিম মিয়ার বাড়ি গেলে জাহাঙ্গীরকে মারধর করা হয়।

এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরবপুর ইউপি মেম্বার শহীদুজ্জামান শহীদ বলেন, গত ২২ জুন স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দেয় আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ও অপরটির কাউন্সিলর শহীদুজ্জামন শহীদ।

শাহারুলের প্যানেলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করেন- ঠাকুর দাস, রহিম, আজিজুল, সাহিদা ও সাজেদা এবং শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করেন- রকিব, ইসমাইল ও মিনারা বেগম। শহীদ মেম্বারের প্যানেলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করেন- শহীদ, মজনু, জাহাঙ্গীর, সুমন দাস ও আসমা বেগম এবং শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করেন- মতিয়ার, জাহাঙ্গীর ও শিরিনা।

এ নির্বাচনে অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে শাহারুলের প্যানেলে সবাই বিজয়ী হন। কিন্তু শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে শাহারুলের প্যানেলে একমাত্র মিনারা জয়লাভ করেন। বাকি দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি মতিয়ার ও জাহাঙ্গীর শহীদ মেম্বারের প্যানেল থেকে জয়লাভ করেন। এতে চেয়ারম্যান শাহারুল ক্ষুব্ধ হন। তিনি প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি খাতুনকে দিয়ে শ্লীলতাহানির নাটক সাজিয়ে শিক্ষক ইউসুফকে ও সহকর্মী জাহাঙ্গীর দেখতে গেলে তাকেও মারধর করে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করেন।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন সিকদার এবং কোতয়ালি থানার ওসির মোবাইল নাস্বারে ফোন দিলে কেউ ফোন ধরেননি।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড