• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বর্ষাকাল এখন লামা উপজেলাবাসীর কাছে আতঙ্কের মৌসুম

  মো. নুরুল করিম আরমান, লামা, বান্দরবান

০২ জুলাই ২০১৯, ১৬:১৪
পাহাড়
ঘুমহীন রাত কাটাতে হয় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের (সংগৃহীত ছবি)

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মানুষের কাছে বর্ষাকালটা আতঙ্কের মৌসুম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কয়েকদিন টানা ভারী বৃষ্টি হলেই লামা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ধস, নদী ও খালের দুপাড় ভাঙন। বর্ষা মৌসুম আসলেই এই এলাকার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নদী তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ঘুমহীন রাত কাটাতে হয়।

এই মৌসুমে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা আতঙ্কে থাকেন কখন আচমকা পাহাড় ধসে মাথার ওপর পড়ে। আবার কখনো বা নদীগর্ভে চলে যায় দুপাড়ে অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে প্রতিবছর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে পুরো বর্ষা মৌসুম জুড়েই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় ৪০ হাজার বাসিন্দাকে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলেই ওপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দুকূলে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় পৌর শহরসহ পাশবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বন্যার সময় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরের ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। ব্যবসায়ীদের চরম হিমশিম খেতে হয় দোকানের মালামাল নিরাপদে সরাতে।

এ দিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস। পাহাড় থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধনের কারণে বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি সাধন করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মাইকিং করে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার পরিবার প্রাণহানির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ওই সব স্থানে বসবাস করছে।

অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমের মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে নদীর দুপাড়ে তখন ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে লামা পৌর এলাকা, রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ বিষযে লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক শুরু হয়েছে। বন্যা শুরু হলে কোথায় তাদের মালামাল হেফাজত করবে, কীভাবে মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেবে, সে প্রস্তুতি নিয়ে তারা এখন থেকে ভাবছেন। কারণ বিগত বছরগুলোতে হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে লামাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

লামা বাজার স-মিল এলাকার বাসিন্দা মো. নবীর উদ্দিন, আলী আকবর, হোসনে আরা খুশু ও মো. ইব্রাহীম জানায়, মুষলধারে বৃষ্টি নামলে বন্যার আশঙ্কায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসে থাকতে হয়। পরিবারের মূল্যবান জিনিসপত্র সরাতে হয়। বর্ষা শুরু হতেই আবারও তার পরিবারের সদস্যরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই পৌরসভা এলাকার মানুষের মাঝে বন্যা, পাহাড় ধস ও নদী ভাঙন আতঙ্ক দেয়। এসব সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পৌরসভা এলাকা পরির্দশন করে বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আশা করি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।

এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সহযোগিতাও কামনা করেন, পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।

ওডি/ এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড