• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পত্রিকা বিক্রিতে সংসার চলে গ্রাম্য ডাক পিয়ন জিন্নাত আলীর

  ইয়ার হোসেন, ঝিকরগাছা, যশোর

০১ জুলাই ২০১৯, ১১:৩৪
ডাক পিয়ন
পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালান ডাক পিয়ন জিন্নাত আলী ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

গ্রামের একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি তিনশ থেকে চারশ টাকা, একজন নির্মাণ শ্রমিকের পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা, শহরের একজন রিকশা চালকের দৈনিক আয় ছয়শ থেকে এক হাজার টাকা। অথচ একজন শিক্ষিত গ্রাম ডাক কর্মচারীর মাসিক বেতন চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা! এই টাকা দিয়ে তিনি সংসার চালান কীভাবে?

দেশের প্রায় ২৫ হাজার ডাক বিভাগের গ্রাম্য ডাক কর্মচারী ইডি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল) কর্মচারীদের এই বেহাল দশা। বর্তমান বাজার অনুযায়ী বেতন অনেক কম হওয়ায় চিঠি বিলির সঙ্গে সঙ্গে কিছু পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালান ঝিকরগাছার জিন্নাত আলী নামের একজন ডাক পিয়ন (বিলিকারী)। তাদের যেন দেখার কেউ নেই!

এখনো প্রতিটি গ্রাম্য ডাক কর্মচারীর মাসিক বেতন ৪ হাজার টাকার কিছু ওপরে। ফলে এত অল্প টাকা বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে সারা দেশে ডাক বিভাগে কর্মরত ২৪ হাজার ৩৯ জন কর্মচারীর। এতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে গ্রাম্য পোস্ট অফিসের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ১৩টি । সেই হিসেবে, প্রতিটি শাখায় তিনজন করে হলে ২৪ হাজার ৩৯ জন ইডি কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের অধিকাংশই গ্রামের শিক্ষিত বা মোটামুটি শিক্ষিত নারী-পুরুষ।

ডাক বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন- শাখা পোস্ট মাস্টার এক জন, চিঠি বিলিকারী (পিয়ন) এক জন ও ডাক বহনকারী (রানার) এক জন। এসব কর্মচারীদের বেতন যথাক্রমে- শাখা পোস্ট মাস্টার ৪ হাজার ৪৬০ টাকা, পিয়ন ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা এবং রানারের বেতন ৪ হাজার ১৭৭ টাকা। অথচ আমাদের পাশের দেশে একই চাকরিতে তাদের বেতন ২০/২২ হাজার টাকা বলে ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এসব কর্মচারীদের সরকারি জাতীয় পে-কমিশন অনুযায়ী কোনো বেতন স্কেল নেই। বর্তমান সরকার সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসবভাতাসহ সব ধরনের ভাতা প্রদান করছে। অথচ ডাক বিভাগের এসব কর্মচারীদের জন্য কোনো উৎসব ভাতার ব্যবস্থা নেই। গ্রাম্য পোস্ট অফিসের এসব ইডি কর্মচারী ইউনিয়ন বিভিন্ন সরকারের সময়ে প্রায় ২০/২২ বছর ধরে সরকারের কাছে উৎসবভাতার দাবি জানিয়ে আসলেও তার এখনো পর্যন্ত সুরাহ হয়নি। সামান্য বেতনে ডাক বিভাগের এসব কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন-যাপন করছেন।

এ ব্যাপারে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজিরদরগা অফিসের ডাক বহনকারী রফিকুল ইসলাম জানান, তার বাবা মাত্র তিনশ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন এবং তিনি দীর্ঘদিন এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তিনিও এই চাকরি করছেন। বর্তমান বাজারদরে সামান্য বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

উপজেলার মির্জাপুর পোস্ট অফিসের পিয়ন (টিঠি বিলিকারী) জিন্নাত আলী বলেন, ১৯৯৬ সালে ৫৫৬ টাকা বেতনে এই চাকরিতে যোগদান করি। বর্তমান ৪ হাজার ৩ শত ৫৪ টাকা বেতন পায়। এই টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই চিঠি বিলির সঙ্গে সঙ্গে কিছু দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করি। দুটো মিলে কোনো রকমে সংসার চলে যাচ্ছে।

তার মতো উপজেলার পাল্পার ডাক বহনকারী মাহাবুবুর রহমান, বাঁকড়ার বিলিকারী ইদ্রিস আলীও চাকরির সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালান বলে জানা গেছে।

পাল্পা বাজারে ডাক বহনকারী মাহাবুবুর রহমান জানান, এভাবে সংসার চালানো সম্ভব না। সরকার আমাদের দাবি না মানলে ডাক বিভাগের বহু কর্মচারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে। বিষয়টি বর্তমান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মানবিক দৃষ্টিতে দেখার, এবং গ্রাম্য ডাক কর্মচারীদের দুঃখ লাঘবের আহ্বান জানান তিনি।

ওডি/এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড