• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

  সিলেট প্রতিনিধি

২৯ জুন ২০১৯, ০৬:২৫
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেটে উজান ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সিলেটে উজান ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারী, গোয়াইন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে অনেক স্থানে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শহর, পৌরসভা, বাজারে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজে পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশংকা। নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ ইতোমধ্যে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধিতে গোলাপগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া অতি বৃষ্টির কারণে পৌরসভার অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে লোকজনের চলাচল।

গোলাপগঞ্জের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার দাড়িপাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বৃষ্টি হলেই প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে ক্লাস করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এতে করে শিক্ষার্থীদের যেমন পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দাড়িপাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাতটি ক্লাসরুম ও একটি অফিস কক্ষ নিয়ে গঠিত। আটজন শিক্ষক ও প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে এ বিদ্যালয়ে। টানা বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমসহ পাঁচটি ক্লাসের ভেতরে পানি ঢুকে মারাত্মক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা ও ক্লাস রুমে জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়। বিদ্যালয়টি গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা পৌরসভার পক্ষ থেকে উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে। বিগত সময়ে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনের লক্ষে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ব্যারিকেড তুলে নেন তারা।

জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রুবেল, উপজেলা সমবায় অফিসার মো. জামাল মিয়া, দাড়িপাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুলেমান আহমদসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে দাড়িপাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, ভারী বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা ও ক্লাসরুম পানিতে তলিয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে।

তিনি জানান, বিদ্যালয়ের বিপরীত মুখে তেল-গ্যাস কূপের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ নির্মাণের কারণে বৃষ্টি পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর ও দাড়িপাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য রুহিন আহমদ খান জানান, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। কৈলাশ টিলা ৭ নম্বর তেল-গ্যাস কূপের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ নির্মাণ ও বিদ্যালয়ের পানি নিষ্কাশনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। পৌরসভার পক্ষ থেকে আগামীতে নতুন করে ড্রেনেজ নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলছে। বিপদ সীমার মাত্রা ছুঁই ছুঁই পানি পুরো উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর পানি ছিল ৮.৬৪ পয়েন্টে। সন্ধ্যার পরে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৮.৬৯ পয়েন্টে। এর আগের দিন কুশিয়ারা নদীর পানি ছিল ৮.৪২ সেন্টিমিটার। এক দিনের ব্যবধানে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ পয়েন্ট। অস্বাভাবিক এ পানি বৃদ্ধির কারণে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার কুশিয়ারা নদীর তীর ছুঁই ছুঁই করছে আচমকা বেড়ে যাওয়া পানিতে। অন্য দিকে পানির চাপ আরও বাড়লে নদী ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলোতে নদী তীর ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা জানান, ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর বিপদ সীমার মাত্রা ৮.৯১ পয়েন্ট। পানি বাড়ার মাত্রা যে ভাবে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দিনের মধ্যে এই উপজেলায় বন্যা হতে পারে।

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে কানাইঘাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লোভা ও সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে লোভাছড়া পাথর কোয়ারী দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দিঘীরপাড় পূর্ব, সাতবাঁক বড়চতুল রাজাগঞ্জ, ঝিঙ্গাবাড়ী, সদর, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ কওে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কানাইঘাট পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কানাইঘাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কানাইঘাটে বন্যা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এছাড়া গোয়াইন ও সারি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। অনেক মানুষ ইতোমধ্যেই পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড