• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভাগ্য বদলায় না কাঠের পিঁড়ির সেলুন কারিগরদের

  আব্দুস ছালাম সফিক, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

২৫ জুন ২০১৯, ১২:৩৮
মানিকগঞ্জ
পিঁড়িতে বসা সেলুন

আধুনিক সভ্যতার ক্রম বিবর্তনের ফলে দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এসেছে পরিবর্তন। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সেলুন। এসব সেলুনে চলছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও দাপটের মাঝেও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এখনও সমানতালে টিকে আছে আবহমান বাংলার সেই চিরচেনা পিঁড়িতে বসা সেলুন। তবে পুঁজি কম থাকায় ভাগ্য বদলায় না ওই সেলুনের কারিগরদের।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন বাজারসহ প্রায় ৪০টি হাট-বাজার রয়েছে। এসব হাট-বাজারের পরিত্যক্ত খোলা জায়গায়, রাস্তার কিনারে, ফুটপাতে ও টিনের তৈরি একচালা ঘরের নিচে বসে বংশ পরম্পরায় পিঁড়িতে বসা সেলুনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন নাপিতরা।

বিভিন্ন গ্রাম থেকে দরিদ্র লোকেরা চুল কাটতে এসব সেলুনে আসেন। এসব সেলুনে চুল কাটতে ২০ টাকা ও শেভ করতে ১০ টাকা লাগে। সারাদিন কাজ শেষে একজন নাপিত আয় করেন দুই থেকে আড়াই শত টাকা। এই টাকাই চলে তাদের জীবন। এই টাকাই চলে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ। বছর শেষে আয় বলতে কিছুই থাকে না তাদের। ফলে একটি আধুনিক সেলুন তৈরি করতে পারছেন না তারা।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে উপজেলার সাভার বাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাপড় মহালে টিনের তৈরি একটি দুই চালার নিচে দ্বীলিপ শীল ও প্রসেনজিৎ নামে দুইজন নাপিত কাজ করছেন। তাদের পাশেই পরিত্যক্ত জায়গায় কাঠের তৈরি একটি পিঁড়ির ওপর ছোট গামছায় চুল কাটার ও শেভ করার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি রাখা আছে। বাবুল শীল একজন ব্যক্তিকে পিঁড়িতে বসিয়ে হাঁটুর কাছে মাথা নিয়ে চুল কাটছেন। মধু শীল একজন বৃদ্ধের শেভ করছেন। আর কয়েকজন লোক অপেক্ষায় বসে আছেন।

চুল কাটতে আসা পাতিলাপাড়া গ্রামের সাদেক আলী জানান, আধুনিক সেলুনে শেভ করতে লাগে ৩০ টাকা। এই সেলুনে শেভ করতে লাগে ১ ০টাকা। তাই এখানে এসে শেভ করি।

সালুয়াকান্দি গ্রামের স্বপন মিয়া বলেন, চেয়ারে বসে চুল কাটলে লাগে ৫০টাকা। আর এখানে লাগে ২০ টাকা। আমরা গরিব মানুষ। তাই এখানে ২০ টাকা দিয়ে চুল কাটতে আসি।

নাপিত বাবুল শীল বলেন, আমি পিঁড়িতে বসিয়ে ৪০ বছর ধরে এ কাজ করছি। প্রথম জীবনে চুল কাটছি এক টাকা ও দাড়ি কাটছি পঞ্চাশ পয়সা দিয়ে। সে সময় নাপিতদের যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার ভালোভাবে চলত। কিন্তু বর্তমানে ২০ টাকায় চুল ও ১০ টাকায় দাড়ি কেটেও সারাদিনে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

চাচিতারা গ্রামের নাপিত মধু শীল বলেন, আমি ৪৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। চুল ও দাড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক সেলুনগুলোতে এখন আর শান দেয়া ক্ষুর নেই। এর বদলে এসেছে ব্লেড। এসেছে শেভিং ক্রিম, ফোম, উন্নতমানের লোশন। যখন আমরা এ কাজ শুরু করেছিলাম তখন এসব ছিল কল্পনার বাইরে। প্রতিদিন যা উপার্জন করি তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে যায়। আধুনিক সেলুন দেওয়ার মতো এতো টাকা হাতে নেই।

সাটুরিয়া কালুশাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ আমিনুর রহমান খাঁন মজলিশ জানান, আধুনিকতার ছোঁয়া ও জীবন মানের উন্নয়নের ফলে কালের বিবর্তনে পিঁড়ির সেলুন হারিয়ে যেতে বসেছে।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড