• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীতে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে বহিরাগত কিশোররা

  ফেনী প্রতিনিধি

২৪ জুন ২০১৯, ২০:৪৬
আটক
নানা অপরাধে জড়িত কিশোরেরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনী শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। এসব অপরাধীদের অধিকাংশই বহিরাগত। ফেনীতে চারটি হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ক্লু উদঘাটনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব অপরাধীরা ১৪-১৮ বছর বয়সী। এ বয়সে তারা ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত থাকায় জেল খাটছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের গাজী ক্রস রোডের হাসান আলী ভূঁঞা বাড়ি সংলগ্ন হক ম্যানশন থেকে চলতি বছরের ৩০ মে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন সফি উল্যা (৬০) এর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের ছেলে আবদুল মোতালেব বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁঞা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের অ্যাকাডেমি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার পঞ্চকরণ গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার (১৯) ও তার ভাই রনি (১৬), একই থানার সুনিজর গ্রামের কাজী বাড়ির মো. আব্বাস খানের ছেলে মো. ইয়াছিন সাকিব (১৬) ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার চর মোহনা গ্রামের আলীমুদ্দিন দেওয়ান বাড়ির মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (১৬)।

টাকা চুরি করতে পিয়ন সফি উল্যাহকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রাব্বি, সাকিব ও রনি। হত্যা করে এক লাখ টাকা ও স্বর্ণ, একটি ওয়ালটন মোবাইল সেট নিয়ে যায়। সাকিব ১০ হাজার ও মোবাইল ফোন, রাব্বি ১০ হাজার এবং রনি ৫শ টাকা ভাগে পায় বলে আদালতে জবানবন্দিতে জানায়। রবিবার (১৯ মে) সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর ছনুয়া গ্রামে নিখোঁজের দুইদিন পর বেলায়েত হোসেন (৪৫) নামে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে ওই দিন ফার্মের কর্মচারী মো. ফুজায়েল আহম্মদকে গ্রেফতার করে।

ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম ও বোগদাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ওমর হায়দার অভিযান চালিয়ে শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে সংলগ্ন সদর উপজেলার উত্তর ছনুয়া গ্রামের একটি খাল থেকে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। মনোমালিন্যের জের ধরে বেলায়েত হোসেনকে হত্যার কথা স্বীকার করে পরের দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ফুজায়েল।

ফুজায়েল নেত্রকোণা জেলার বারহাটি থানার আবদুল ওহাবের ছেলে। নিহতের ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে ফার্মের কর্মচারী মো. ফুজায়েল আহম্মদকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ দিকে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর ৭ এপ্রিল ভোরে স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেন শুভ (১৪) এর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আরাফাত পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী মাদার কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩১ মার্চ রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তেমুহনী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় আরাফাত হোসেন শুভ। এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। ৭ এপ্রিল রবিবার ভোরে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারায় একটি কলা বাগানের ঝোপ থেকে তার গলাকাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে দক্ষিণ কাশিমপুরের কালা মিয়া কন্ট্রাক্টর বাড়ির প্রবাসী ইমাম হোসেনের ছেলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুরেজিৎ বড়ুয়া জানান, ৮ এপ্রিল সোমবার বিকালে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামের আবদুস সালাম মিস্ত্রী বাড়ি থেকে মো. কামাল উদ্দিনের ছেলে ও তেমুহনী মাদার কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুভকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে বলে পরেরদিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সহপাঠী মো. ইসমাইল হোসেন ইমন (১৪)। ইমনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার ঘরের আলমিরা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

২৭ জানুয়ারি শহরের পাঠানবাড়ী এলাকা থেকে নিখোঁজ স্কুল ছাত্র আরাফাত হোসেন (১২) এর লাশ পরের দিন পাঠান বাড়ী এলাকার জেবি টাওয়ারের সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ২৮ জানুয়ারি দুপুরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূলহোতা সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকারীরা আরাফাতের পা ভেঙে ফেলে নৃশংস ভাবে তাকে হত্যা করে।

২৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান সাব্বিরকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সাব্বির সেদিন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয় ও জড়িত ৪-৫ জনের নাম প্রকাশ করে। জবানবন্দিতে সাব্বির আরও জানায়, মুন্না, তুহিন ও সাব্বিরসহ চারজন মিলে গলাচিপে শ্বাসরুদ্ধ করে আরাফাতকে হত্যা করে।

সাব্বির বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার অধিবাসী হলেও সে পাঠানবাড়ী এলাকার এমরানের কলোনিতে ভাড়া থাকে। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে আরাফাতদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং এ কাজ করে। আরাফাতের মা বিবি রাবেয়া বাদী হয়ে সাব্বিরকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। আরাফাত প্রবাসী মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। সে পুলিশ লাইন্স স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড