• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের ছোবলে ফসলি জমি

  গাংনী প্রতিনিধি, মেহেরপুর

২৪ জুন ২০১৯, ১৮:৫০
পার্থেনিয়াম
বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মেহেরপুরের গাংনীর আনাচে কানাচে বেড়ে উঠেছে পার্থেনিয়াম। মেক্সিকো, আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়ার পর এবার বাংলাদেশে শেকড় গেড়েছে বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম।

পার্থেনিয়ামের জন্ম ক্ষেতের আইল, রাস্তার ধারে অথবা বাড়ির পাশে জঙ্গলে। দেখতে সুন্দর আর বাহারি পাতার মধ্যে সাদা ফুল সবার নজর কাড়লেও এটি এক ধরণের বিষাক্ত আগাছা, যা মানুষের ও প্রাণীদের নানা ক্ষতি করে। তার পরও এটি সমূলে বিনাশ করায় কারো মাথা ব্যথা নেই। আবার কৃষকরা জানেও না এর ক্ষতিকর দিক।

জানা গেছে, পার্থেনিয়ামের বৈজ্ঞানিক নাম হাইস্টিরো ফোরাস। এই বিষাক্ত উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় ১ থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পার্থেনিয়াম শাখা বিস্তারের মাধ্যমে গম্বুজ আকৃতির অথবা ঝোপ আকারের হয়। পাতা শাখাযুক্ত ত্রিভুজের মতো। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ চার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদি পশুর গোবর, গাড়ির চাকা ও পথচারীদের জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গে এর বংশবিস্তার ঘটে।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়ামে ভরে গেছে ফসলি জমি (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পার্থেনিয়ামে রয়েছে টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য অতি ক্ষতিকর। এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা উপকারী কীটপতঙ্গ ও ফসলের ক্ষতি করে। ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মেক্সিকো ও আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত গমের সঙ্গে এ বীজ এদেশে প্রবেশ করেছে। প্রথমে এর বিস্তার কম থাকলেও বর্তমানে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। এর রেণু বাতাসের সঙ্গে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের সৃষ্টি করে।

পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বক ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে। পার্থেনিয়ামে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।

গাংনীর হাটবোয়ালিয়া, বামন্দি, হেমায়েতপুর হুদাপাড়াসহ বিভিন্ন রাস্তার ধার ও জমিতে পার্থেনিয়াম দেখা গেছে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত জমিতে এর বংশ বিস্তার বেশি। এসব এলাকার চাষিরা জানে না এর আসল নাম কি। সবাই এটাকে আগাছা হিসেবে চিনলেও এর ক্ষতিকারক দিকটি সবার অজানা। এটি মানবদেহ ও পশুর জন্য হুমকি এবং ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও উপেক্ষিত।

কুঞ্জনগরের কৃষক হারান আলী জানান, বছর দশেক আগেও দেখেছেন এ উদ্ভিদ কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক তারা জানে না।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম সাহাবুদ্দীন জানান, পার্থেনিয়াম যেভাবে শেকড় গেড়েছে তার এককভাবে মূল উৎপাটন সম্ভব নয়। প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্লকের উপ সহকারী কৃষি অফিসারদেরকে জরিপ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, পার্থেনিয়ামের বীজ নষ্ট করা কষ্টসাধ্য। এ গাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগ করে বিনাশ করতে হবে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড