• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

 প্রচণ্ড গরমে নওগাঁর জনপ্রিয় খাবার তালশাঁস 

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

২৩ জুন ২০১৯, ১১:৫৪
তালশাঁস

নওগাঁ জেলার প্রতিটি এলাকার তালগাছগুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। মধু মাসের এ ফলকে কেউ বলে তালশাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আঁটি। প্রচণ্ড গরমে তালশাঁস শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঋতু হচ্ছে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল। এই সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচুসহ অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস। তালের এই নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি তালকুর নামে বেশি পরিচিত।

বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমি ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম পড়েছে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল পাইকারি দরে কিনে তালগুলো কেটে বিভিন্নজন তালগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস খাওয়া সম্ভব হয় না।

গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। গ্রীষ্মের এই দিনে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পোঁছে যায় কচি তালের শাঁস। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে গেছে তালশাঁস নিতে।

জানা গেছে, নওগাঁর গাছের তাল যাচ্ছে পাশবর্তী জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই তাল গাছ রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই।

তালের শাস একটি সুস্বাদু ফল। নওগাঁ সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এবং অলিতে গলিতে তালের শাঁস বিক্রি করে অনেক হতদরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।

মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের সতীহাটের তাল বিক্রেতা সেকেন্দার আলী জানান, তিনি প্রতিবছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেড়ে এনে শাঁস বিক্রি করেন। তবে গাছ ওঠে, কাঁদী ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে চারজনের সংসার ভালোই চলছে।

নওগাঁ সদরের চকবাড়িয়া মহল্লার ক্রেতা সাহেব আলী জানান, গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেতে ভালোই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে রাস্তার দু-ধারে সারি সারি তাল গাছের দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে জেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ শখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের চারা রোপণ করত কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।

নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত মোহনা কম্পিউটারসের মালিক জাকির হোসেন বলেন, আমি প্রায়ই বাড়িতে খাওয়ার জন্য তালের শাঁস কিনে নিয়ে যাই। মধুমাসের অন্যান্য ফলের তুলনায় এই শাঁস পরিবারের সকল সদস্যদের কাছে খুবই প্রিয়। এটি নরম ও সুস্বাদু। সব বয়সের মানুষই এটি সহজে খেতে পারে। তুলনামূলকভাবে এর দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই শাঁস বেশিদিন পাওয়া যায় না।

তালের শাঁসের পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. এসএম ফজলুররহমান বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন- এবিসিসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।

ওডি/ এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড