• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্রাইয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা

  খন্দকার আব্দুল মালেক, আত্রাই, নওগাঁ

২৩ জুন ২০১৯, ১০:২৪
বাঁধ নির্মাণ
মাছ চাষের জন্য উন্মুক্ত জলাশয় বিলসুতিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা ( ছবি :দৈনিক অধিকার)

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয় বিলসুতিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলে গত বুধবার (১৯ জুন) বাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত দুটি স্ক্যাবেটর জব্দ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে আবারও স্ক্যাবেটর নিয়ে এসে বাঁধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী মহলটি।

এভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে কয়েক হাজার কৃষক ফসলি জমি নিয়ে এবং মৎস্যজীবীরা জীবিকা নির্বাহে বিপাকে পড়বেন। ফলে ভুক্তভোগীরা দ্রুত বাঁধটি ভেঙে সমান করে দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন ও রাজশাহী বাঘমারা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে উন্মুক্ত জলাশয় বিলসুতি। প্রায় সাত বছর আগে এ উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুর্খী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খনন করা হয়। ফলে এ বিলের পানি গজমতখালি খাল দিয়ে নেমে শুটকিগাছা হয়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে নামে। এ জলাশয়ে আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ (ছয় মাস) পর্যন্ত পানি থাকে। এ পানি দিয়ে ওই ইউনিয়নের বড় শিমলা, চকশিমলাসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির বোরো ও আউশের আবাদ করে থাকেন। এছাড়া ওইসব গ্রামের প্রায় পাঁচশ মৎস্যজীবী এ জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

গত দুই বছর ধরে ওই জলাশয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেনসহ প্রায় শতাধিক প্রভাবশালী বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর আত্রাই উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খালের মুখ বন্ধ করে ১৫/২০ দিন ধরে দুটি স্ক্যাবেটর মেশিন দিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খননের সুফল থেকে বঞ্চিত বিলসুতি বিল। এছাড়া বোরো মৌসুমে পানি বিল থেকে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষ ব্যাহত হবে বলে মনে করেন কৃষকরা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, তাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে প্রভাবশালীরা ক্ষমতার জোরে বাঁধ নির্মাণ করছেন। অথচ তাদের সঙ্গে একটা আলোচনা করার কোনো বিষয় মনে করেনি। বাঁধ নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে পানি জলাশয় দিয়ে নামতে পারবে না। এতে করে স্বল্প সময়ে বন্যার সৃষ্টি হবে। ফসল ডুবে ক্ষতি হবে। আবার জলাশয় ওই প্রভাবশালীদের দখলে থাকবে। মৎসজীবীরা মাছ শিকার করতে পারবেন না।

বড়শিমলা গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন বলেন, এই মাঠে আমার সাত বিঘা ফসলি জমি আছে। ওই জমিতে আবাদ করে আমার সারা বছরের ভরণপোষণ হয়ে থাকে। একটি প্রভাবশালী মহল প্রজেক্টের নাম করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জোরপূর্বক জমি দখল করে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন। যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় না থাকায় বর্ষা মৌসুমে আমাদের ফসল ডুবে যাবে। আবার যে জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে সেই জমিও নষ্ট হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক শাহজাহান, মোজাম্মেল আলী, আজিজুর রহমান, মোখলেছার রহমান, সত্যেন্দ্রনাথসহ কয়েকজন বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী থেকে যে খাল খনন করা হয়েছে তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করতে প্রভাবশালীরা বাঁধ তৈরি করছেন। বাঁধ তৈরি করা হলে নিচের জমিগুলো ডুবে যাবে। কোনো ফসল হবে না। এছাড়া গরু-ছাগলকে ওই মাঠে তিন মাস ঘাস খাওয়ানো হয়। বাড়তি খড়ের দরকার হয় না। গত তিন বছর থেকে ওই জলাশয় থেকে পানি উঠানো যাচ্ছে না। আমার ঠিকমতো জমিতে পানিও দিতে পারছি না। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে ঘটনাস্থল থেকে স্ক্যাবেটর জব্দ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও নতুন করে স্ক্যাবেটর নিয়ে এসে কাজ করা হচ্ছে।

হাটকালুপাড়া গ্রামের মৎসজীবী বয়তুল্লাহ ও আব্দুল করিম বলেন, আমরা দীর্ঘ বছর এই জলাশয় থেকে চাষ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। গত তিন বছর জলাশয় থেকে কোনো মাছ ধরতে পারছি না। কারণ প্রভাবশালীরা আমাদের জলাশয়ে নামতে দিচ্ছে না। আমরা জীবন জীবিকা নিয়ে বড়ই বিপাকে পড়েছি। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে আমাদের প্রজেক্টের দরকার নাই। আমরা জলাশয় উন্মুক্ত চাই। বাঁধ নির্মাণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বিলসুতি বিলে গত কয়েক বছর ধরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাঁশের বেড়া (বানা) দিয়ে মাছ চাষ করা হতো। এবারে সেটা কয়েকশ সদস্য মিলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করার লক্ষ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কৃষক ও মৎসজীবীদের কোনো ক্ষতি হবে না বরং তারা উপকৃত হবেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, বিলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন সংবাদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্ক্যাবেটর মেশিন জব্দ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধে আইনগতভাবে যা করা দরকার, সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এটি একটি অবৈধ কাজ। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে স্থানীয় কৃষক ও মৎসজীবীদের সমস্যায় পড়তে হবে। যারা এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

ওডি/ এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড