মো. আরিফ হোসেন, বরিশাল
ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশার (ইজিবাইক) নগরীতে পরিণত হয়েছে দক্ষিণের নগরী বরিশাল। ৫৮ বর্গকিলোমিটার নগরীর সিংহভাগ সড়ক দখল করে আছে নিয়ন্ত্রণহীন এসব অটোরিকশা। সেসব অটোরিকশার চালকের নেই লাইসেন্স কিংবা অটোরিকশা পরিচালনার অভিজ্ঞতা। আইন লঙ্ঘন করে চালানো এসব অটোরিকশার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের পাশাপাশি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, এমনকি প্রাণহানিও ঘটছে।
আগে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সদর রোডে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে ফেলায় স্থানীয়ভাবেই এখন তৈরি হচ্ছে এসব অটোরিকশা। যা বিক্রি করা হচ্ছে চড়া মূল্যে। দিনে দিনে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, বিসিসির দ্বিতীয় পরিষদের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে নগরীতে চালু হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। তৎকালীন মেয়রের আমলে সিটি কর্পোরেশন থেকে দেড় হাজারের মতো অটোরিকশার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ওই মেয়রের আমলেই দেশব্যাপী তা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে সাবেক মেয়র নগরীতে অটোরিকশা চলাচল অব্যাহত রাখেন।
উচ্চ আদালত এবং সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করলেও বিসিসির তৃতীয় পরিষদের মেয়র আহসান হাবিব কামাল তার সময়ে অটোরিকশার লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স প্রদান করেন। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ২ হাজার ৬১০টি। কিন্তু বাস্তবে এই নগরীরতে চলাচল করছে ১০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
ট্রাফিক বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নগরীতে এসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কাগজপত্রবিহীন হাজার হাজার অটোরিকশা। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে হিড়িক পড়েছে নতুন অটোরিকশা বানানোর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া ২ হাজার ৬১০টি অটোরিকশার টোকেন ব্যবহার করে দ্বিগুণের বেশি অটোরিকশা চলছে নগরীতে। কোনোটিতে অবৈধভাবে ভুয়া টোকেন ব্যবহার করা হচ্ছে, আবার কিছু অটোরিকশা ভিন্ন কৌশলে চালানো হচ্ছে টোকেন ছাড়াই। টোকেন হারানোর ভুয়া তথ্য দিয়ে থানায় জিডি করেও অনেকে চালাচ্ছেন অটোরিকশা।
নগরীর সদর রোড, চকবাজার, গির্জা মহল্লা, রূপাতলী থেকে কালিজিরা, সাগরদী বাজার থেকে টিয়াখালী সড়ক, নবগ্রাম রোড, বারৈজ্যার হাট, কাউনিয়া মরকখোলার পোল থেকে কাগাশুরা এবং হাটখোলা সড়কসহ অলিগলিতে চলাচল করছে এসব অবৈধ অটোরিকশা।
অবশ্য ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের দায়ের হওয়া একটি রিট এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে নগরীর সদর রোড এলাকায় হলুদ অটো প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু বরিশাল সিটি মেয়রের নির্দেশে নগরীতে পুনরায় হলুদ অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটও বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীতে যেসব হলুদ অটোরিকশা চলাচল করছে তার সিংহভাগ চালকের নেই লাইসেন্স বা কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাদের নেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা। সিটি করপোরেশন এবং ট্রাফিক আইন অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কোনো শিশু-কিশোর হলুদ অটোরিকশা চালাতে পারবে না। লাইসেন্সধারী চালককে হলুদ অটোরিকশা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্যান্ট পরে নিতে হবে। চালকের দুই পাশে কোনো যাত্রী বহন করতে পারবে না। নিয়ম থাকলেও এসব কেউ মানছে না।
অধিকাংশ হলুদ অটোরিকশা চলাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর এবং অন্য পেশা থেকে আসা শ্রমিকরা। যাদের নেই চালক লাইসেন্স বা অভিজ্ঞতা। লুঙ্গি পরে চালানো হচ্ছে হলুদ অটোরিকশা। আবার সামনে যেখানে চালকের একার বসতেই কষ্ট হয়, সেখানে দুই পাশে দুই জন এবং পেছনে আরও চারজনসহ ছয়জন নিয়ে চলছে মাত্র দুই সিটের এই তিন চাকার যান। আবার রাস্তার পাশে, এমনকি রাস্তার মাঝেও যত্রতত্র অটো থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা এবং সড়ক আটকে স্ট্যান্ড বানিয়ে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে ব্যাটারি চালিত হলুদ অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।
ওডি/ এসএএফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড