• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাগাতার লোকসানে ধান চাষে অনীহা কৃষকের

  রাণীনগর প্রতিনিধি, নওগাঁ

২১ জুন ২০১৯, ১৯:৪৫
ফসলী মাঠ
চাষ বিহীন ফসলী মাঠ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নওগাঁর রাণীনগরে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে ধানের দরপতনে কৃষকদের লোকসান হওয়ায় চলতি আউশ মৌসুমে ধান চাষে অনিহা প্রকাশ করছেন চাষিরা। বীজতলা প্রস্তুত থাকলেও আউশ ধান রোপণ করছেন না এই এলাকার কৃষকরা। ফলে এ বছর রাণীনগর উপজেলায় (বর্ষালী) আউশ ধান চাষ সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে চলতি মৌসুমে প্রায় ছয় হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন ঘাতটিতে পরল রাণীনগর উপজেলা।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত আউশ (বর্ষালী) মৌসুমে রাণীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হলেও ধান উৎপাদন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিকটন। এ বছর আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় চার হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কৃষকরা জমিতে ধান রোপণ করেননি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বীজতলা প্রস্তুত থাকলেও লোকসানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকা কৃষকরা ধান রোপণ করতে গড়িমসি করছেন। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে থাকা কৃষি উপসহকারীরা বলছেন, পুরোদমে আউশ ধান চাষ শুরু না হলেও বেশকিছু এলাকার কৃষকরা স্বল্প পরিসরে নিজস্ব জমিগুলোতে চাষাবাদ শুরু করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান চাষের লক্ষ্যে কৃষকরা প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন সমিতি, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অথবা ব্যক্তি পর্যায়ে ধার-দেনা ও গরু-ছাগল বিক্রি করে রোদ-বৃষ্টিতে হার ভাঙা পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে থাকেন। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে হাল চাষ থেকে শুরু করে চারা রোপণ, পানি সেচ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন খরচ হয়। আর কাটা-মাড়াই শেষে বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে লাভ তো দূরের কথা হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। কৃষকরা বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে রোপা-আমন, আউশ ও ইরি-বোরো ধান চাষ করে বিভিন্ন ভাবে লোকসানের কবলে পরেছেন তারা। কখনো ধানে রোগ-বালাইয়ের কারণে ফলন বিপর্যয়, আবার কখনো ধানের দর পতন এবং দ্বিগুণ সেচ মূল্যসহ বিভিন্ন কারণে লাগাতার লোকসান হচ্ছে ধান চাষে। তাই এ বছর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক আউশ ধান চাষ করছেন না। বোরো ধানের দর পতনের কারণে রোপা-আমন ধান চাষ নিয়েও কৃষকের তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই বলে স্থানীয়রা জানান।

আউশ ধানের অঞ্চলখ্যাত রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান, বড়িয়াপাড়ার দুলাল মৃধা, সিলমাদার গ্রামের মুনছুর রহমান, হরিপুর গ্রামের নিশি চন্দ্র জানান, গত আউশ মৌসুমে জমিতে ধান রোপণ করে ফলন একটু কম হলেও বাজারে ভালো দাম পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর ইরি-বোরো ধান বাজারে বেচাকেনা হয়েছে প্রতি মণ ৬৮০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা পর্যন্ত।

তাতে সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্যের চাইতে প্রায় সাড়ে ৩শ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। কৃষকদের দাবি, যেখানে ইরি ধানেরই দাম পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে আউশ ধানের দর পেয়ে লাভবান হতে পারবো এর নিশ্চয়তা কে দিবে? তাই চলতি মৌসুমে আউশ ধান চাষাবাদ করবেন না কৃষকরা।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর আউশ মৌসুমে প্রায় তিন হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এ বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার দপ্তরের লোকজন মাঠ পর্যায়ের চাষিদের আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে কৃষকদের খুব বেশি সাড়া মিলছে না।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড