পাগলি মায়ের সূর্য এখন রাজধানীতে

মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলার আরিচাঘাট এলাকায় ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। নবজাতকের পিতৃপরিচয় নেই। ওই নারী ‘ধর্ষণের শিকার’। শিশুটি এখন রাজধানীতে।

ফুটপাতে ঘুরে বেড়ানো পাগলি মা সন্তান পালনে অসক্ষম হওয়ায় বৃহস্পতিবার (২০ জুন) নবজাতককে ঢাকার একটি সেফহোমে পাঠানো হয়।

নবজাতকের নাম সূর্য। আগে-পরে কিছুই নেই। সে পৃথিবীর আলো দেখেছে বুধবার (১৯ জুন) ভোরে, যখন সূর্য উঁকি দেয় ঠিক তখন। এজন্যই তার নাম সূর্য।

আরিচা বন্দরে ঝাড়ুদারের কাজ করা জানাহারা বেগম জানান, মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত আড়াইটার দিকে এক সন্তানসম্ভবা পাগলি মা প্রসববেদনার চিৎকারে চারপাশের পরিবেশ ভারী করে তুলেছিল। এসময় জানাহারা অসহায় পাগলি মায়ের কাছে ছুটে যান। এরপর আশপাশের কয়েকজন নারীকে ঘুম থেকে ডেকে পাগলির সন্তান প্রসব করান তিনি। বুধবার ভোরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে শিশু।

বাচ্চা প্রসবের পরপরই গুরুতর অসুস্থ হলে ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। নবজাতককে পরিচর্যা করার জন্য হামিদা খাতুন নামে একজনের কাছে রাখা হয়েছিল।

স্থানীয় নিহালপুর গ্রামের কালা সেখের স্ত্রী জানাহারা আরও জানান, তিনি ওই রাতে প্রতিদিনের মতো ঝাড়ু দিতে বাজারে যান। এ সময় তিনি চিৎকার শোনে এগিয়ে দেখেন পাগলি প্রসববেদনায় কাদা-মাটিতে গড়াগড়ি করছেন। পাগলির কষ্ট দেখে গ্রামের ধাত্রী মেহেরুন নেছা, সুলতানাসহ কয়েকজন নারীকে ঘুম থেকে তুলেন জাহানারা। রাতভর চেষ্টার পর ভোরে সন্তান প্রসব করান তারা।

পাগলি ও তার সন্তান বেঁচে যাওয়ায় জাহানারাসহ ওই নারীদের প্রশংসা করেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা পাগলির ধর্ষককে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন ওই শিশুকে দত্তক নিতে আগ্রহী ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী প্রায় ছয় বছর ধরে আরিচাঘাটে ঘোরাঘুরি করেন। রাতে পুরনো টার্মিনালে খোলা আকাশের নিচে থাকেন।

সংবাদ পেয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএফএম ফিরোজ মাহমুদ ঘটনাস্থলে যান। তিনি পাগলিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। ইউএনও নবজাতকের নাম দেন সূর্য। সূর্যের পরিচর্যার দায়িত্ব দেন হামিদাকে। ইউএনও তখন আর্থিক সহায়তাও করেন।

ফিরোজ মাহমুদ বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটিকে ঢাকার একটি সেফহোমে পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে কেউ দত্তক নিতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে।

ওডি/এমআর