• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শরীয়তপুর ভুয়া বাদী দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার

  শরীয়তপুর প্রতিনিধি

১৯ জুন ২০১৯, ১৯:২৬
শরীয়তপুর
শরীয়তপুর দায়রা জজ আদালত ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

শরীয়তপুর বিচারিক আদালতে ভুয়া বাদী দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার করার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৭ মে সখিপুর আমলী আদালতে ভুয়া বাদী দাঁড় করিয়ে যৌতুক মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সখিপুরের বালাকান্দি গ্রামের সেলিনা বেগমের সঙ্গে ১০ লাখ টাকা কাবিনে বিবাহ হয় শাহজালালের। বিয়ের কিছু দিনপর শাহজালাল সেলিনার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে যৌতুক হিসাবে টাকা চাইতে থাকেন। এমনকি সেলিনাকে টাকার জন্য মারধোর করেন। তাই সেলিনা স্বামী শাহজালালের নামে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে সখিপুর আমলি আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় একটি মামলা করেন।

মামলাটি অ্যাডভোকেট মাঈনুল ইসলাম অদুদের হলেও। অ্যাডভোকেট অদুদের স্বাক্ষর নিয়ে তার অনুপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রাজিব ও তারই মোহরার সাহেদ ভুয়া বাদী দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার করেন। অপরদিকে শাহজালাল সেলিনার বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে কাবিন বাতিলের মামলা করেন।

পরের দিন ২৮ মে যখন প্রকৃত সেলিনা কোর্টে আসেন। বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারক বুঝতে পেরে মামলাটি পুনরায় বিচার কাজ শুরু করার আদেশ দেন। এনিয়ে সাহেদ মোহরার ও শফিকুল ইসলাম রাজিব উকিল, সেলিনাকে বিভিন্ন উল্টা-পাল্ট কথা বলেন। তখন সেলিনার সঙ্গে থাকা অভিভাবক মেনা হাওলাদার অন্য এক উকিল দিয়ে মামলার খোঁজ খবর নিলে জানতে পারেন যে, ভুয়া বাদী দেখিয়ে গত ২৭ মে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তখন রাজিব উকিলের সেরেস্তায় এসে দেখেন চেম্বার তালা মেরে সবাই চলে গেছে।

এ নিয়ে বাদী সেলিনা অভিযোগ করেন, ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় অ্যাডভোকেট রাজিবের কাছে যাই। উকিল ও মুহুরী সাহেদের কারণে আমাদের এই অবস্থা। আমি এখন স্বামী সংসার ছাড়া। আমাদের সঙ্গে উকিল-মুহুরি যে প্রতারণা করেছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই।

শাহ জালাল বলেন, দুই লাখ টাকার কাবিননামা হওয়ার কথা ছিল। শফিকুল ইসলাম রাজিব উকিল ও তার মোহরার সাহেদ এবং মোহরার আবুবকর সেলিনাকে ফুঁসলিয়ে আমার অজান্তে ১০ লাখ টাকার কাবিননামা করে। আমি এর বিচার চাই।

সূত্র জানায়, সাহেদ মুহুরি শরীয়তপুরের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে ভুয়া সেলিনা বানিয়ে খোলা তালাক দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী মো. আলী বলেন, অনেক কাজ তো করি এমন ঘটনা আমার মনে পড়ে না।

সেলিনার স্বামী শাহজালাল অভিযোগ করেন, উকিল-মুহুরি আমার সঙ্গে জালিয়াতি করেছে। দুই লাখ টাকার কাবিনের কথা বলে তারা সেলিনাকে কু-বুদ্ধি দিয়ে ১০ লাখ টাকার কাবিন করিয়েছে। আমি এই বিষয়ে মুহুরির নামে একটা প্রতারণার মামলা করেছি।

অন্যদিকে সেলিনা বলেন, মুহুরি আমাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন ১০ হাজার টাকা দিলে ১০ লাখ টাকার কবিন করে দিবো। স্বামী তোমাকে তালাক দিলে তুমি ১০ লাখ টাকা পাবে।

এ নিয়ে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। ওই মামলার পাওয়ার আমার না। অন্যরা করেছে।

আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। জেলা আইনজীবী সমিতির শক্তিশালী মহলের ইন্ধনে এই সব জুনিয়র উকিলগুলো অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করে যাচ্ছে। ভুয়া বাদী সাজিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য শাহ জালালের কাছ থেকে মোহরার সাহেদের মাধ্যমে অ্যাড. শফিকুল ইসলাম রাজিব এই কাজের বিনিময়ে দেড় লাখ টাকা নেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম বলেন, রাজিব উকিলের অনুপস্থিতিতে তার মোহরার সাহেদ অদুদ উকিলের স্বাক্ষর নিয়ে শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে রাজিব উকিল অন্য একজন বাদীকে দাঁড় করিয়ে সখিপুর আমলি আদালতে মামলা উত্তোলনের একটি আবেদন করেন। পরে আদালতের ধার্য তারিখে আসল বাদী সেলিনা হাজির হয়ে বিচারককে জানান, তিনি মামলা তুলে নেওয়ার কোনো দরখাস্ত করেননি।

অ্যাড. জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই দিন আমি আদালতে উপস্থিত ছিলাম। বিচারক আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আমি বিচারককে বলেছি বার কাউন্সিল ও বার সমিতির মাধ্যমে আমরা যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে জেলা বার সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু সাইদ দৈনিক অধিকারকে বলেন, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রাজিব আইনজীবী সমিতির সদস্য। তিনি ভুয়া বাদী সাজিয়ে মামলা প্রত্যাহার করছেন। এমন একটা অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় আছে। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তাহলে আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওডি/এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড