বাগেরহাট প্রতিনিধি
সুন্দরবনে জলদস্যুতা নির্মূলে উপকূল রক্ষী বাহিনী কোস্টগার্ড অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সুন্দরবনে বড় কোনো দস্যু বাহিনীর তৎপরতা এখন আর নেই তবে পাঁচ-ছয়জন মিলে ছোট ছোট দস্যু দল গঠন করে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও শোনা যায় প্রায়।
জানা যায়, দস্যুবাহিনী বনের ভেতর শতশত সরু খালে এখন তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছে। যে ডিঙি নৌকা নিয়ে তারা ডাকাতি করে, সেই নৌকাতেই তাদের বাস। পাঁচ-ছয়জনের ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত থাকে তারা। সরু খালের মধ্যে ডিঙি নৌকাতে ঘাপটি মেরে থাকে তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছাতে পারে না। প্রতিনিয়ত এসব জলদস্যুর আতঙ্কে থাকে জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা। তবে অনেক জেলে দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করেন। সুন্দরবনের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জলদস্যুদের এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপকূল রক্ষী বাহিনী কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ড ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোট ৬৩ জন ডাকাতকে আটক করেছে।
কোস্টগার্ড বাহিনীর সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘দস্যুরা জেলেদের ছদ্মবেশে বের হয়। এজন্য তাদের শনাক্ত করা কঠিন। তারা বনের গহীনে সরু খালের মধ্যে অবস্থান নিয়ে থাকে। অনেক সময় কোস্টগার্ড বাহিনীর স্পিড বোট সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। কোস্টগার্ড সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় গভীর বনে তাদের আস্তানায় পৌঁছালেও তারা দ্রুত সরে পড়ে। তবে মাঝেমধ্যে দস্যুরা আটকও হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তার পাশাপাশি সুন্দরবনে জলদস্যুতা, বনদস্যুতা ও ডাকাতি দমনে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এত বৃহৎ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কোস্টগার্ড সদস্য খুবই কম। জনবল বৃদ্ধি পেলে দস্যুদের দমন করা সহজ হবে।’
কোস্টগার্ড সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অভিযানে মোট ৬৩ ডাকাত আটক হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড ব্লাঙ্ক গোলা।
কোস্টগার্ড বাহিনীর আর এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বড় কোনো গ্যাং না থাকলেও ছোট ছোট অসংখ্য গ্যাং রয়েছে। একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে গড়ে ওঠে জলদস্যুর একটি গ্যাং। এরা নৌকার জেলেদের ধরে মুক্তিপণ দাবি করে। ক্ষেত্র বিশেষে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করে। কখনো কখনো নৌকার মাছ ও খাবার ছিনিয়ে নেয়। এমন অসংখ্য ছোট ছোট বাহিনী রয়েছে জলদস্যুদের। একসময় সুন্দর বনের আতঙ্ক ছিল জিয়া বাহিনী। তবে বছর তিনেক আগে সে মারা যাওয়ার পর এখন বড় কোনো বাহিনী আর নেই।
তিনি জানান, মাঝিরা যেখানে মাছ ধরতে যায়, মৌয়ালরা যেখানে মধু সংগ্রহ করতে যায়, সেই স্থানগুলোই থাকে জলদস্যুদের প্রধান টার্গেট। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, ছোট কলাগাছিয়া, বড় কলাগাছিয়া, শ্যামনগর, খুলনার নলিয়ান, দাকোপ, মাতারবাড়ী, বাগেরহাটের নন্দবালা, কটকা, বরগুনার পাথরঘাটার চরডুয়ানি এলাকাতে জলদস্যুদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ভোরে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার পদ্মা মাঝের চরে বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চলের চর এলাকায় কোস্টগার্ডের ডাকাতবিরোধী অভিযানে পাঁচটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি সিঙ্গেল শুটার পিস্তল ও ২১ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের গভীরে সোনাইমুখী খাল সংলগ্ন এলাকায় ডাকাত দল আছাবুর বাহিনীর সঙ্গে কোস্টগার্ডের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আছাবুর বাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মার্চ সুন্দরবনের চরদোয়ানী এলাকায় নবগঠিত জাকির বাহিনীর গুলিতে মো. আলাউদ্দিন নামে এক নিরীহ মাঝি মারা যান। সেই সূত্র ধরে কোস্টগার্ড বাহিনী গোপনে তথ্য অনুসন্ধান করে জানতে পারে, সুন্দরবনের পদ্মা মাঝের চরের দুর্গম এলাকায় জাকির বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসহ আশ্রয় নিয়েছে। ওই অপারেশন পরিচালনার জন্য ঢাকা থেকে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু বনের ভেতর পথ দুর্গম হওয়ার কারণে কোস্টগার্ড বাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে ডাকাতদল দ্রুত বনের ভেতর পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ওই আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাসমূহে বনদস্যু জলদস্যুদের অপতৎপরতা রোধে কোস্টগার্ড সদস্যরা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড বাহিনী।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড