ফেনী প্রতিনিধি
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় কারাবন্দি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা আ. লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তি চেয়ে উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাপক পোস্টারিং করা হয়েছে। প্রচারে উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে সংগঠনের নেতাদের দাবি এ পোস্টারিংয়ের সঙ্গে দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই।
সোমবার (১৭ জুন) মধ্যরাত থেকে উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রচুর পরিমাণে পোস্টার লাগানো হয়েছে। পোস্টারে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তিরও দাবি জানানো হয়।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক জানান, এই পোস্টারিংয়ের সঙ্গে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ভূট্টো জানান, এসব পোস্টারিংয়ের সঙ্গে যুবলীগের কেউ জড়িত নেই। সাংগঠনিকভাবে কাউকে এসব পোস্টারিংয়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম জানান, তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করে মুক্তি চেয়ে পোস্টারিং করা ঠিক হয়নি। যারা পোস্টারিং করেছেন, তাদের উচিত ছিল- তাকে সাবেক সভাপতি লেখা। আমার জানা মতে, তার মুক্তির দাবিতে ছাপানো পোস্টারের সঙ্গে জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নাই।
এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৯ মে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করা হয়। পরে ৩০ মে জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উপজেলা আ'লীগের সভাপতি রুহুল আমিন একটি মামলায় কারাগারে থাকায় অধ্যাপক মফিজুল হককে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই সময় এ তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে একই মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন তার মা শিরিন আক্তার। গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুসারীরা নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত।
গত ২৯ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে মামলার এজাহারভুক্ত আট জনসহ ১৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। ১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে এ মামলায় গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিলসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২৯ মে চার্জশিটভুক্ত কারাবন্দি আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, প্রভাষক আবসার উদ্দিন, মো. শামিম, ইফতেখার উদ্দিন, নূর উদ্দিন জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি ফেনী কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড