এ সিদ্দিকী শাহীন, গাংনী, মেহেরপুর
মায়ের মৃত্যুর পর বাবাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল খুশি খাতুন (১২)। কিন্তু তা হয়নি। সৎ মা আর বাবার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে মামার বাড়িতে। শুধু তাই নয় পিতা মাত্র ৭০ হাজার টাকার মুচলেকায় দায় মুক্তি নিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে। খুশি খাতুন ঐ গ্রামের আ. হান্নানের মেয়ে ও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
জানা গেছে, বছর দেড়েক আগে খুশি খাতুনের মা কাজল রেখা দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর কয়েক মাস পর বাবা আ. হান্নান বাগোয়ান গ্রামের ইমান আলির মেয়ে ইয়াসমীন আকতার কে বিয়ে করে। বেশ ভালোই কাটছিল তাদের দিন। বিয়ের মাস তিনেক পর সৎ মা ইয়াসমীন আকতারের চোখের বালি হয়ে ওঠেন খুশি খাতুন।
কারণে অকারণে খুশি খাতুনকে নির্যাতন করতে থাকে। মাস ছয়েক আগে থেকে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে খুশি খাতুন চলে আসে মামা হিয়ারুল ইসলামের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। কয়েকদিন পর ফিরে যেতে বাধ্য হয় বাবার বাড়িতে।
গেল রমজানের ঈদের আগে খুশি তার মামা বাড়িতে বেড়াতে যায়। ঈদের আগের দিন বাবা আ. হান্নান তাকে নিতে গেলে মামা-মামিরা ঈদের পরে পাঠানোর কথা বললে গাল মন্দ করে ফিরে আসেন এবং মেয়েকে গ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। তার পরও মামা-মামি অনুনয় বিনয় করে জানায় যে খুশি যেহেতু ছোট আর তার মা নেই সেহেতু ঈদ উৎযাপন শেষে তাকে রেখে আসা হবে।
দিন পাঁচেক আগে মামা-মামিরা খুশি খাতুনকে তার বাবার বাড়িতে রেখে যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় খুশি খাতুনের ওপর অকথ্য নির্যাতন। তাকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। সৎ মা তাকে খেতে না দিলে বাবাকে জানালে বাবা আ. হান্নান উল্টো খুশিকে দোষ দিয়ে মারধর করত। মাঝে মধ্যে তাকে উপোষ করে দিন কাটাতে হতো।
খুশি জানায়, মা ও বাবার নির্যাতনের বিষয়টি তার সৎ ভাই জাব্বারুল জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে নানান হুমকি দিত। মামি আলেয়া বেগম জানান ছোট মেয়ে তাই ভয়ে অনেক কিছুই বলত না। কিন্তু আমরা বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার খুশির মামাকে আ. হান্নানের বাড়িতে পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চাই। সেখানেও খুশির বাবা তার মামা হিয়ারুল ইসলামকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামানকে জানালে তিনি সালিশ বৈঠকের ডাক দেন।
চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান, খুশির অধিকার নিয়ে তার বাবাকে চাপ দেওয়া হলে তিনি তার মেয়েকে কাছে রাখতে চাননি। নানান অজুহাতে শিশু কন্যা খুশিতে দোষারোপ করে। সেই সাথে তার সৎ ভাই জাব্বারুল ও বোন আয়েশাকেও দোষারোপ করে। এ ব্যাপারে এক বৈঠকে আ. হান্নান মাত্র ৭০ হাজার টাকায় শিশু কন্যা খুশিকে পরিশোধ করে দায় মুক্তি চেয়ে মুচলেকা প্রদান করে। আগামী তিন মাস পরে ঐ টাকা তিনি পরিশোধ করবেন। যেহেতু বাবা তার কন্যাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায় সেহেতু আর কারওর কিছু করার থাকেনা।
এ দিকে আ. হান্নান জানান, তার মেয়ে খুশি খাতুন তার মামা-মামি আর সৎ ভাই বোনের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সৎ মাকে মানতে চায়না তাই তাকে শাসন করা হয় মাত্র। কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, আ. হান্নান বহু বিবাহে অভ্যস্ত। প্রথম স্ত্রীকে সে বিনা দোষে তালাক প্রদান করে। দ্বিতীয় স্ত্রী নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। তৃতীয় স্ত্রী কাজল রেখা বিনা চিকিৎসায় ক্যানসারে মারা যায়। বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস। সূত্রটি আরও জানায়, দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। যাদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড