• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নদীতে পুকুর কেটে মাছ চাষ! 

  শামীম খান, মহেশপুর, ঝিনাইদহ

১৬ জুন ২০১৯, ২২:২৫
কোদলা নদী
প্রমত্তা কোদলা নদী এখন বিলীনের পথে (ছবি- দৈনিক অধিকার)

দখলের মুখে প্রমত্তা কোদলা নদী এখন বিলীনের পথে। ঝিনাইদহের মহেশপুরে নদীর ২৫ কিলোমিটার অংশ দখল করে নিয়েছে দখলদাররা। নদীর বুকে পুকুর কেটে করছে মাছ চাষ। সরেজমিনে এমন অন্তত শতাধিক পুকুরের দেখা মিলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীতে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক বা ভূমি অফিস কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দখলের কারণে নদীতে পানি প্রবাহ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ৮ থেকে ১০টি খাল-বিলের পানি ও ১২৩টি মৌজার কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতায় ধানসহ কোনো ফসল হচ্ছে না।

স্থানীয় এক বৃদ্ধ জয়ন আলী বলেন, নদীতে বাঁধ আর পুকুর উচ্ছেদ করতে হবে। আগে নদীতে ১২ মাস পানি থাকত। এখন খালের পানি নদীতে না আসায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

নদী পাড়ের বাসিন্দা বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, কোদলা নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে আবার ভারতে চলে যাওয়ায় বছরের সব সময়ই প্রচুর পানি থাকত। এখনও ভারতের অংশে প্রচুর পানি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমানায় দখলের পর দখল হওয়ায় নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর বাঁশবাড়িয়া অংশে বেশি দখল করা হয়েছে। এই অংশে শতাধিক দখলদার বড়-বড় পুকুর কেটেছেন। সেই সঙ্গে নদীর মধ্যে মাটি ভরাট করে গাছ লাগিয়েছেন। যেগুলো বড় হয়ে নদীকেই আড়াল করে ফেলেছে। আর দখলের কারণে বেশ কিছু গ্রামের কৃষকদের চাষযোগ্য জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

অন্যদিকে দখলদাররা বলছেন, পুকুর কেটে মাছের চাষ করায় এলাকার মানুষের উপকার হচ্ছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল দৈনিক অধিকারকে জানান, নতুন খতিয়ান খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড করে ভুমিদস্যুরা কোদলা নদী দখল করেছে। এই নদী দিয়েই বেশ কয়েকটি নদী ও বিলের পানি বের হয়। এছাড়া বড়বিল, কেউরোর বিল, ঢলঢলে বিল, তিথির বিল, পুটিমারি বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের পানি খালে নামে। সেই খাল থেকে পানি চলে যায় কোদলায়।

চেয়ারম্যান জানান, কোদলা নদীর প্রস্থ ১৪০ থেকে ১৫০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে তা কমে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ফুট আছে। কোনো কোনো স্থানে এর থেকেও কমে মাত্র ১০ ফুট হয়েছে। এই ইউনিয়নেই বেশি দখল হয়েছে। এই এলাকায় শতাধিক পুকুর খনন করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভন্ন দপ্তরে দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদী খননের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে পুকুর কেটে করছে মাছ চাষ (ছবি- দৈনিক অধিকার)

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, নদীর জায়গা দখলের সুযোগ নেই। তবে অনেকে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে জমি দাবি করছেন। আরএস রেকর্ড সম্পন্ন না হওয়ায় এখনই বলা যাচ্ছে না নদী জায়গা কেউ দখল করেছে কি না।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সবুজ দৈনিক অধিকারকে বললেন, নদী সরকারি সম্পত্তি। সিএস রেকর্ডে নদী হিসাবে আছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা পুকুর উচ্ছেদ করে ছোট নদী-খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদীটি খনন করা হবে।

প্রসঙ্গত, কোদলা সীমান্তবর্তী নদী। এটি ভারত সীমান্ত থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার কিছু অংশ হয়ে আবার ভারতে চলে গেছে। মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড়, ন্যাপা, কাজিরবেড়, বাশবাড়িয়া ও যাদবপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। নদীটির বাংলাদেশ সীমান্তে দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটার।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড