• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে এ ফল

  লামা প্রতিনিধি, বান্দরবান

১৫ জুন ২০১৯, ১৬:১৬
পাইন্ন্যাগুলা
পাইন্ন্যাগুলা (ছবি : সংগৃহীত)

পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙ্গুর ফলের মতো। এ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। ইংরেজিতে এই ফলকে বলে কফি প্লান্ট। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া এই ফল অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। পাকা পাইন্ন্যাগুলা ফল লাল টুকটুকে, তবে কিছুটা বেগুনি রঙেরও ছোপ রয়েছে। কামড় দিলেই যেন রসে ভরা স্বাদ। আঙ্গুর ফলের মতো এর বর্ণ ও আকার। ভেতরে ৫ থেকে ৬টি খুবই ছোট বীজ থাকে। সকল বয়সীদের কাছে পাইন্ন্যাগুলা খুবই প্রিয় খাবার। তবে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় পাহাড়ি এলাকা থেকে এ ফল গাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন ‘সি’। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমানভাবে। পাইন্ন্যাগুলা ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকরিতা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। এর শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে। পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশের পাহাড়ি ভমিতে প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের গাছ জন্মায়। বছরের মে মাসের শুরুতে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাইন্ন্যাগুলা ফল পাকা শুরু হয়। তখন এখানের বিভিন্ন হাটবাজারে সচরাচর বিক্রি হয়ে থাকে এই ফল। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ফল চাষে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।

মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহ করে দেশের সমতল অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। তবে কিছু কিছু বাগান মালিক নিজেরাই হাট বাজারে পাইন্ন্যাগুলা বিক্রি করেন। বর্তমানে এ ফল বাজারে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সচরাচর বাজারে দেখা যায়।

পার্বত্য লামা পৌর এলাকার ফুটেরঝিরি, নয়াপাড়া, মধুঝিরি, সাবেক বিলছড়ি ও চেয়ারম্যান পাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড় সরেজমিন ঘুরে প্রায় অর্ধশত পাইন্ন্যাগুলা গাছ দেখা যায়। এছাড়া উপজেলার রুপসীপাড়া, গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ে সহস্রাধিক পাইন্ন্যাগুলা গাছে রয়েছে। এসব গাছে প্রচুর পাইন্ন্যাগুলা ধরে থাকে।

লামা বাজারের পাইন্ন্যাগুলা বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহীন ও সেলিম জানান, ৯ বছর আগে পৌর এলাকার মধুঝিরিস্থ তার ফলদ বাগানের এক কোণে ১টি পাইন্ন্যাগুলা গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। গত মৌসুমে এ গাছে প্রায় দুই মণ পাইন্ন্যাগুলা ধরে। প্রতিকেজি ৯০ টাকা হারে ৭ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তিনি আরও বলেন, আম, জাম ও কাঁঠালের মতো পাইন্ন্যাগুলা ফলের গাছ দীর্ঘ মেয়াদী হয়ে থাকে। বীজ থেকে চারা জন্মে। কলমের মাধ্যমেও এর ফলের চারা উৎপাদন করা যায়।

এ বিষয়ে লামা উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূরে আলম বলেন, লুকলুকি অর্থাৎ পাইন্ন্যাগুলা পাহাড়ি অঞ্চলেই জন্মে। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল। এর ঔষধী গুণাগুণ রয়েছে। এখানের আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে এখানের পতিত পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পাইন্ন্যাগুলা চাষ করা গেলে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড