এম.কামাল উদ্দিন, কক্সবাজার
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ২০ মাসে দেড় লাখ শিশুর জন্ম হয়েছে। বর্তমানে গর্ভবর্তী নারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার। দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার যে বিপুল চাপ তার মধ্যে আরও নতুন করে এসেছে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী। তবে যারা আসছে তাদের বেশির ভাগই নারী।
অশিক্ষিত এসব রোহিঙ্গা মুসলমানরা ধর্মকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী। ফলে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ভাসমান জীবনেও থেমে নেই তাদের উচ্চ জন্মহার। যার ফলে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নবজাতক। যার পুরো চাপটাই এখন পড়েছে আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের ওপর।
মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রবেশে যেমন করে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ উজাড় করেছে রোহিঙ্গারা তেমনভাবে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এক মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে। এছাড়াও সংক্রামক রোগের জীবাণু বহন করে এসব রোহিঙ্গারা।
সরকারি হিসাবমতে, গত বিশ মাসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জন্ম নিয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক নবজাতক শিশু। আর বর্তমানে গর্ভবর্তী নারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার হতে পারে। তবে বেসরকারি হিসাব মতে এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। রোহিঙ্গাদের এ জন্মের হার এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত কক্সবাজারের স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে তাদের আশঙ্কা।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যম্পের ইউনিসেফ সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক তাদের ঢাকা হেড অফিসের জরিপে গত এক বছরে ৬০-৭০ হাজার শিশু নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। এদিকে গত বছর কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস ১৮-২০ হাজার গর্ভবর্তী নারী সনাক্ত করেছে। তবে তারা বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ১ লক্ষ শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গবেষণা করে বলছে, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো প্রতিদিন ১৩০টি শিশু জন্মগ্রহণ করছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, অনেক ভয় আশঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। এখানকার ভবিয্যতের কথা চিন্তা করলে প্রায় সময় চোখে জল চলে আসে। এই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কিভাবে আমরা মুক্তি পাব তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের পাহাড় পর্বত জমি-জায়গা দখল করতে শুরু করছে। অন্যদিকে অপরাধ চক্রের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। কি যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বসবাস করছি তা বুঝে উঠতে পাচ্ছি না। যে হারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. সরোয়ার আলম শাহীন বলেন, আমরা এখন এক ধরনের গৃহবন্দির মতো বসবাস করছি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা আমাদের বনভূমি, পাহাড়জঙ্গল, জলাশয়, রাস্তাঘাট প্রাকৃতিক পরিবেশসহ এমন কি কর্মসংস্থানের পরিবেশ ও ধ্বংস করে ফেলেছে। এছাড়াও নানাভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে নানাভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এছাড়াও জীবন-যাত্রার মান সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে দিন দিন। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয়রা কিছু দিন পরে রোহিঙ্গাদের কাছে লেবার হিসেবে কাজে যেতে হবে। অপর দিকে যে সকল এনজিও আছে তারা চায় না রোহিঙ্গা এদেশ থেকে চলে যাক। রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা এখন আর কাজকর্ম করতে পারছে না। দ্রুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে সরকারের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সেভ দ্য চিলড্রেন মিডিয়া তদারককারী ম্যানেজার ইভান শারম্যান বলেন, কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে গিয়ে প্রায় ১ লক্ষ নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করবে। এমনটাই ধারণা করছি আমরা। এমনিতেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি এসব শিশু জন্ম নিলে আরও গাদাগাদি অবস্থা হয়ে যাবে। এমনিতেই ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সামনে আরও বিপদ দেখা দিতে পারে। রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে আগ্রহী না। ক্যাম্পগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকার কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি কাশি ও কলেরা রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।
টেকনাফ ২১ নম্বর ক্যাম্পের মেডিকেল অফিসার ডা. আয়েশা কবির বলেন, রোহিঙ্গারা এমন এক জাতি তারা যেটা বুঝে সেটাই তাদের চলাচল। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায় না। তারা ধর্মকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক শিশু জন্ম দিচ্ছেন। কোনোভাবেই তারা ডাক্তারের কথা শুনতে রাজি না।
টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মো. ইসলাম বলেন, অত্যন্ত দুঃখে আছি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কক্সবাজার টেকনাফের পরিবেশ বিনষ্ট করে ফেলছে রোহিঙ্গারা। আর কিছু দিন গেলে রোহিঙ্গাদের কাছে আমাদের গোলামি করতে হবে। রোহিঙ্গারা আসার পর হতে টেকনাফ বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া বাড়ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সরকারি চাল ডাল পেয়ে খাচ্ছে আর শিশু জন্ম দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ এখান থেকে পাড়ি জমাচ্ছে সুদূর মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব। অপরদিকে রোহিঙ্গারা এখান থেকে গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। সে ব্যাপারে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ওডি/এসএএফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড