শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি নদী মহারশি থেকে অন্তত ৮টি পয়েন্টে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিনরাত চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এছাড়াও উপজেলার পাহাড়ি বিভিন্ন ছড়া, খাল ও নদী থেকে চলছে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা।
প্রতিদিন শতশত ট্রাক ভর্তি করে এসব বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। কিন্তু একই ঠিকাদার উপজেলার পাহাড়ি নদী তাওয়াকোচা সোমেশ্বরী থেকেও সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বালু। এতে নদীর তীরবর্তী বসতি ও আবাদি জমি ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় নদীতীরে বসবাসকারীরা।
জানা যায়, জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা বালু মহালটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আসাদুজ্জামান স্বপন নামে এক ব্যক্তি ১৪ এপ্রিল ২০১৮ থেকে ১৩ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ১ বছর মেয়াদি ইজারা গ্রহণ করে। এরপর ইজারার মেয়াদ শেষ হলে বালু ঠিকমতো উত্তোলন করতে পারেনি লোকসান হয়েছে এই মর্মে ঠিকাদার চলতি বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত ঠিকাদারকে ৭ এপ্রিল আরও ৬ মাস বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়।
এদিকে সরকার পক্ষ হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বয়ং বাদী হয়ে চলতি বছরের ২ মে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করলে চেম্বার কোর্ট হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে বালু উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ২৪ জুন শুনানির আদেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এখনো বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। এ বিষয়ে গত ২৩ মে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করায় স্থানীয় জনগণ আইজিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহারশি নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বর্তমানে নদীর তীরবর্তী এলাকার বসতি ও আবাদি জমি ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। একইসাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ও গ্রামীণ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সন্ধ্যাকুড়ায় মহারশি নদীর সেতুসহ বেশ কিছু ব্রিজ-কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে মোবাইল কোর্টে বসিয়ে বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি জব্দ ও জরিমানা করা হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন।
মহারশি নদী তীরে বসবাসকারী হাসেন আলী, মকবুল হোসেন, রজমান আলীসহ অনেকে জানান, ‘আমরা খুব আতঙ্কে আছি, কখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় আমাদের বসতবাড়ি। দিনরাত মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেবে আমরা আশা করছি।’
ওই এলাকার বাসিন্দা বক্কর মিয়া বলেন, ‘স্যার আমাগোরে রক্ষা করেন। যেমিলে (যেভাবে) বালু তুলতাছে (উত্তোলন) করছে, আমগোর ঘর-বাড়ি সব নদী মধ্যে যাবো গা।’
পাশেই থাকা রমিজ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে এভাবে কয়েকটা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি দ্রুত ব্যবস্থা করে দেন।’
ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতের শুনানি আগামী ২৪ জুন। ওই তারিখের আগ পর্যন্ত আমি বালু তুলতে পারব। এছাড়া চেম্বার আদালতের অর্ডার স্থানীয় প্রশাসন বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখে আমাকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দিয়েছে।
ঝিনাইগাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, চেম্বার জর্জের আদেশ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেবো। ঝিনাইগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস দৈনিক অধিকারকে বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার হওয়ায় জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন যদি আমার সহযোগিতা চায় তাহলে আমি সহযোগিতা করতে পারব।
সিভিল কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার রাকিবুল হাসান দৈনিক অধিকারকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে আসাদুজ্জামান কর্তৃক করা ২৬১৫/১৯ নম্বর রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ মে স্থিতি অবস্থার আদেশটি ভূমি সচিব কর্তৃক আনিত ১৩৫৬/১৯ নম্বর লিভ টু আপিলের মাধ্যমে স্থগিত হওয়ায় ইজারাদারের বালু উত্তোলন আদালত অবমাননার সামিল।
এ ব্যাপারে এডিসি (রাজস্ব) এবিএম এহসানুল মামুন দৈনিক অধিকারকে বলেন, আদালতের দুইটি আদেশ বিজ্ঞ জিপির মতামত চাওয়া হবে। মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড