পীরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় লাছি নদী পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ- অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করায় ছোট হচ্ছে নদী। আশংকা করা হচ্ছে এবারের বর্ষায় আবারও নদী ভরাট হয়ে যাবে।
জানা যায়, জেলার পীরগঞ্জ পৌরসভাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লাছি নদী। এ নদীটি মিলিত হয়েছে টাঙ্গন নদীর সাথে। গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে লাছি নদীর পুনঃখননের কাজ উদ্বোধন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু খনন কাজ শুরু হয় এ বছরের জানুয়ারিতে। উপজেলার কুশারীগাঁও থেকে টাঙ্গন নদীর সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার লাছি নদী খননে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ইতোমধ্যে ৬ মাসে এ নদীর খনন কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কাজে সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, খনন করা নদীর বালু দিয়ে পাড় নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব পাড়ের বালু এবারের বর্ষায় ধুয়ে আবারো ভরাট হয়ে যাবে নদী। আর নকশা অনুযায়ী নদী খনন না হওয়ায় নদী সংকোচিত হয়ে ছোট হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
নদীপাড়ের বাসিন্দা হাসিম উদ্দিন বলেন, নদীটি সঠিক ভাবে খনন হলে এই এলাকার মানুষ সারা বছর মাছ পাবে। এছাড়াও জলবায়ুর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে তিনি বালু দিয়ে পাড় তৈরির বিরোধীতা করে বলেন, স্থায়ী সমাধানে বাঁধ নির্মান করে লেক তৈরি করার দাবি জানান।
নদীপারের কৃষক শ্রী অচিন্ত রায় বলেন, লাছি ব্রিজের পূর্ব পাশে নদী ভাঙ্গন আছে। তার ১৯ শতক জমি নদীতে বিলিন হয়েছে বলে জানায় ওই কৃষক। নির্মাণ শ্রমিক দরিমান বলেন, নদী পুনঃখনদের উদ্যোগ ভাল। কিন্তু নদী খনন করে যে বালু উঠছে তা দিয়েই দু-ধারে পাড় নির্মাণ হচ্ছে। এই বালুতে ঘাস দেওয়া হলেও তা মারা যাবে এবং নদীর পাড় ভেঙ্গে যাবে।
পীরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা জয়নউদ্দীন, আকবর আলী সহ অনেকে বলেন, নদীর বালু বৃষ্টি হলে বেশির ভাগই ধুয়ে আবার নদীতে পরবে। এতে আবারো ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে ব্যয় করা টাকা নদীতেই ভেসে যাবে বলে জানায় তারা।
কাজে অনিয়ম হওয়ায় ঘাটে ঘাটে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে একটি মহলকে ম্যানেজ করছে সংশ্লিষ্টরা এমন অভিযোগ তোলেন পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কসিরুল আলম। তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বারবার নকশা চেয়েছি। কিন্তু তারা তা দেখায়নি-গরিমসি করছে। আমরা চাই পৌরসভার এই নদীটি ভাল করে খনন করা হোক। এখনো কোথাও খুড়ছে না, কোথাও নদীটি সরু করে ফেলেছে। নদী পাড়ে ৩৬’শ বর্গ মিটার ঘাস এবং ২৪’শ গাছ লাগানোর কথা। কোথাও কোন ঘাস বা গাছ লাগানো হয়নি। সব মিলিয়ে কাজ মোটেও ভাল হচ্ছেনা সরকারী টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার।
তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, নদীর পাড় রক্ষায় ঘাস ও গাছপালা রোপন করা হবে। আর কাজ শুরু হয়েছে। নকশা অনুয়ায়ী শেষ করতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর নদী কোথাও ছোট করা হচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
পাউবোর এই প্রকৌশলী বলেন, পীরগঞ্জের লাছি নদীর গভীরতা হবে ১ দশমিক ৫ মিটার আর প্রস্থ হবে ১০ মিটার। নদীতে সারা বছর পানি ধরে রাখা, মাছ চাষসহ জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব রোধে ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন, শুক ও লাচ্চি নদী এবং যমুনা খাল পুন: খননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড