• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিরানন্দে রাণীনগরের কৃষকের ঈদ উৎসব

  রাণীনগর প্রতিনিধি, নওগাঁ

০৮ জুন ২০১৯, ১৮:৩৬
প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় দুইটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এই দুই ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুন (বুধবার) ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। প্রতি বছরের ন্যায় আরবি সনের রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর এ উৎসবকে সামনে রেখে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে জমে উঠে নতুনত্ব কিছু কেনা-কাটার ধুম।

ঘরে ঘরে সেমাই, মিঠায়-মিষ্টি, কোরমা-পোলাওসহ নানান খাবারের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও গরিব অসহায় পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির জন্য ধর্ম মোতাবেক নির্ধারিত জাকাত-ফিতরা প্রদান করা হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মার্কেটে মার্কেটে কেনা-কাটার ধুম পড়লেও এর ছোঁয়া লাগেনি নওগাঁর রাণীনগরের অধিকাংশ কৃষকের পরিবারে। ধানের নিম্ন মূল্যের কারণে লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক পরিবারে এবারের ঈদুল ফিতর কেটেছে নিরানন্দে।

ঈদের দিন সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কৃষক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ধান উৎপাদনের জেলা হিসেবে খ্যাত নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায় প্রায় পৌনে দুই লক্ষ মানুষের বসবাস। এই এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবার ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। অধিকাংশ কৃষকই ধান চাষ শুরু থেকে কাটা মাড়াই পর্যন্ত যাবতীয় খরচ কিছুটা নগদ ও বাকি রেখে মৌসুম পারি দিয়েছেন।

রমজান মাসেই কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করেছিল এই এলাকার চাষিরা। সে সময় জিরা জাতের সরু ধানের বাজার মূল্য ছিল প্রতি মণ ৭শ টাকা। ধানের নিম্ন মূল্যের কারণে লোকসানে পড়ে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ভেস্তে যায়। অথচ গত বছর ওই সময় একই ধানের বাজার মূল্য প্রতি মণ ৮৫০ টাকা ছিল। লোকসানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এবছর বাধ্য হয়ে ৭শ টাকা দরেই ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন চাষিরা।

ধান ব্যবসায়ীরা চাষিদের ধানের মোট টাকার অর্ধেক নগদ দিয়ে অর্ধেক টাকা কয়েক দিনপর দিব বলে বাকি রেখে পাঁয়তারা করেন। এরই মধ্যেই রাণীনগরের বিভিন্ন মার্কেটে ঈদুল ফিতরের কেনা-কাটার ধুম উঠে। এ সময় কৃষকদের চাপে ধান ব্যবসায়ীরা বাকি টাকা দিলেও দেনার দায়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন নি। পরিচিত জনদের কাছ কিছু টাকা ধার নিয়ে কোনো রকম নিরানন্দের মধ্য দিয়ে ঈদ উৎসব পারি দিয়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।

উপজেলা সদরের সিম্বা গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানের দাম না থাকায় অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। আমার বড় ভাই সেমাই চিনি দিয়েছে এবং জামাই একটা মুরগি কিনে দিয়েছে। ছোট ছেলে-মেয়েদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। তাই তারা রাগ করে ঘরে বসে আছে! ঈদের দিন বাইরেও ঘুরতেও যাচ্ছে না।’

কৃষক লিটন দপ্তরি জানান, ‘প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে গড়ে প্রায় ৭৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে। বাজারে প্রতি মণ ধান ৭শ করে বিক্রি করেছি। এতে মণ প্রতি ৫০ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়েছে। বাজার দর ৮৫০ থেকে ৯শ টাকা মণ হলে খরচ বাদ দিয়ে ভাল লাভ হতো। ঈদে মা, স্ত্রী ও ছেলেকে কিছুই দিতে পারিনি।’

রাণীনগরের কৃষক পরিবারের গৃহবধূ রুবি বেগম ও ময়না বেগম বলেন, ‘আমরা কৃষকের বউ, ধান চাষের ওপরেই আমাদের সংসার নির্ভর করে। ঈদের সময় ছেলে মেয়েদের জন্য নতুন কাপড়-চোপড় কিনতাম, সাথে আমরাও নিতাম। কিন্তু এ বছর ধানের দাম নাই, পাওনাদারকে দিতেই সব শেষ! কেনা-কাটা কিছুই করতে পারিনি।’

রাণীনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান পিন্টু বলেন, ‘ধানের নিন্ম মূল্যের কারণে এ বছর কৃষকের পরিবারে ঈদ আনন্দ জমে উঠেনি। তবে বর্তমানে সরকার পর্যায় থেকে প্রান্তিক কৃষকদের ধান লটারির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য দিয়ে সরকারি গুদামে ক্রয় করা হচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে।’

ওডি/এমএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড