• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে বাড়ছে সঙ্কট

  রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

০৭ জুন ২০১৯, ১৮:৩১
সঙ্টেক হ্রদের নৌপরিবহন
কাপ্তাই হ্রদের পানি কমায় সঙ্টেক হ্রদের নৌপরিবহন। (ছবি : সংগৃহীত)

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে নৌপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বাড়ছে নানা সঙ্কট। কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চ চলাচল। এতে জেলা সদরের সঙ্গে ৬ উপজেলায় নৌ-পরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগে সংশ্লিষ্ট উপজেলার যাত্রীসাধারণ।

বর্তমানে জেলা সদরের সঙ্গে বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলা সদরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্ষার আগে এ পরিস্থিতির উত্তরণ হবে না বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।

এ দিকে প্রতিনিয়ত তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। তার ওপর দিন দিন পড়ছে দখল-দূষণের কবলে। এতে সঙ্কটে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটির এ হ্রদটি।

সম্প্রতি রাঙ্গামাটি সফরকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, রাঙ্গামাটির বিশাল কাপ্তাই হ্রদকে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় ও মূল্যবান সম্পদ। এলাকার জনগণের বহুমুখী সুযোগ-সুবিধার অন্যতম উৎস। তাই এ হ্রদকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য দরকার সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা। তিনি হ্রদের সঙ্কট মোকাবিলায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া আছে বলে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে কিছুটা দেরি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, ড্রেজিং না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে বিভিন্ন সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। নাব্যতা পুনরুদ্ধার না হলে এসব সঙ্কট দূর করা সম্ভব নয়। কাপ্তাই হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। হ্রদটির ড্রেজিং নিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। খুব শিগগরই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হতে পারে। তবে কাপ্তাই হ্রদ রক্ষায় প্রয়োজন সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এই হ্রদ দেশের এবং এলাকার মানুষের সম্পদ।

রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মইন উদ্দিন সেলিম জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ওইসব উপজেলায় লঞ্চ চলাচল করতে পারছে না। তাই ওই ৬ উপজেলার নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষার আগে এ পরিস্থিতির উত্তোরণ হবে না।

তিনি বলেন, আমরা হ্রদের নাব্যতা আনতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য বারবার বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরকে চিঠি লিখেছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা ? স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি বারবার জানিয়ে আসছি। এ পর্যন্ত আমাদের আহ্বানে কেউ সাড়া দেননি।

এ দিকে শহরসহ জেলাজুড়ে হ্রদ সংলগ্ন জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে জনবসতি। এসব বসবাসকারী লোকজনের নিক্ষেপ করা বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ এবং দূষণের শিকার হচ্ছে হ্রদের পানি ও পরিবেশ। ফলে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে তৈরি হচ্ছে নানা সঙ্কট। এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, হ্রদ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও গবেষকরা।

জানা যায়, পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে কাপ্তাইয়ে নির্মিত হয় বাঁধ। এর ফলে সৃষ্টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ কৃত্রিম জলরাশির। হ্রদটি ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ গড়ে ওঠে নানামুখী সুবিধা ও সম্ভাবনা। কিন্তু নাব্যতা হারিয়ে বর্তমানে এসব সুবিধা ও সম্ভাবনা ব্যাহত হতে চলেছে। সৃষ্টির গত ৫৯ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। তার ওপর পড়েছে দখলের কবলে। এ ছাড়া বছরের বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলের পলি জমে এবং বসতি স্থাপনকারীদের নিক্ষেপ করা বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে হ্রদ হারাচ্ছে নাব্যতা।

অন্যদিকে হ্রদে অতিরিক্ত পানি কমায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে মারাত্মক ধস নামছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে কেবল ৮০-১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পরিবেশবাদী ললিত চাকমা বলেন, কাপ্তাই হ্রদের নব্যতা ফিরিয়ে আনতে জরুরি ক্যাপিটাল ড্রেজিং। এ ছাড়া হ্রদ দূষণমুক্ত করা গেলে নব্যতার সঙ্কট কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। বিশাল কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখলের কবলে এবং বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে হ্রদের পানি। হ্রদে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে হ্রদ। দ্রুত কাপ্তাই হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড