কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই সড়কের দুপাশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এ সড়কের কাজ নিয়ে সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এ সড়কের কাজ শেষে এর টেকশই নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এখনো। এ দিকে এই সড়কের দুই পাশে মজবুত করে মাটি না দেওয়ায় সড়কের অনেক জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ সড়কের কোথাও কোথাও ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে মৃত্যুফাঁদ। সরেজমিনে কুষ্টিয়া থেকে কুমারখালী পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত স্থানে ভাঙনের দেখা মিলেছে। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে এ কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও সড়কের মাঝখানে প্রায় সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এই সড়কের কাজ শেষ হতে এখনো বাকি তিন মাস।
কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড়ে কাজের উদ্বোধনী সাইনবোর্ড সূত্রে জানা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুরু হয়েছে এই কাজ। কাজের নাম আহলাদিপুর-রাজবাড়ী-পাংশা-কুমারখালী কুষ্টিয়া (চৌড়হাস) (আর-৭১০) সড়কের চেঃ ৪৫+০৫৬ মিঃ হতে ৬০+০০০ মি.প্রশস্তকরণ, মজবুতকরণ, হাডশোল্ডার নির্মাণ, ২টি আর সিসি কালভার্ট নির্মাণসহ সার্ফেসিং ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ। কাজ শুরু হয়েছে ৮ মার্চ ২০১৮ সাল এবং শেষ হওয়ার কথা ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল। চুক্তিমূল্য ৯৬,৯৯,৭৭,৯৪৯.২৩৪ টাকা। এই সড়কের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেড- রানা বিল্ডার্স (প্রাইভেট) লিমিটেড- জহিরুল লিমিটেড (জে ডি) মল্লিকপাড়া মেহেরপুর।
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বুকে অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই শেষ হতে যাচ্ছে সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের এসব খুঁটি অপসারিত না হওয়ায় সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়ক সংস্কার ও পুননির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকলেও সড়কের মাঝের খুঁটি সরাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিংবা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কার্যত ব্যবস্থা নেয়নি। সড়ক বিভাগ বলছে, তিন বছর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে এসব খুঁটি এখনো রয়েই গেছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ওজোপাডিকো তাদের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করলেও কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি খুঁটিগুলো সম্পূর্ণরূপে অপসারণে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৮ কিমি সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের মার্চ থেকে। বর্তমানে ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটি দুই পাশে আরও ৩ ফুট করে ৬ ফুট প্রশস্ত করার পাশাপাশি মাঝের ১৮ ফুট শুধু ওপরের অংশ সিলকোট করা হচ্ছে। সড়কটি প্রশস্তকরণের ফলে রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ এবং ৩৩ কেভিসহ সহস্রধিক বিদ্যুতের খুঁটি এখন সড়কের মাঝে চলে এসেছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই বিদ্যুতের পোলগুলো সড়কের মাঝে রেখেই অবশেষে সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।
সূত্র মতে, রাস্তা থেকে এসব বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (ওজোপাডিকো) সাড়ে ৬ কোটি ও পল্লী বিদ্যুতের খরচ হচ্ছে পৌনে ৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সিংহভাগ টাকা তাদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা চলতি অর্থবছরে দেয়া হতে পারে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, খুঁটিগুলো সরানোর জন্য টাকা পরিশোধ করা হলেও সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই। এই সড়কে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় কয়েকশ’ বাস-ট্রাক চলাচল করে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, এমনটা হওয়ার কারণ কী জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকা? এই টাকাগুলো কাদের? এই টাকাগুলো যদি আমাদের সকলের হয় তবে কেন আমরা তাদের প্রশ্ন করতে পারব না? কেন আমরা রুখে দাঁড়াতে পারি না? আমাদের টাকায় উন্নয়নের নামে কেন কিছু আমলাদের এমন লুটপাটের উৎসব? তাদের আলিশান বাড়ি ও গাড়ি থাকবে আর সাধারণ জনগণ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরবে। বাহ বাহ বাহ আজব দেশের মানুষ আমরা। তবে এই ১ শ ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নব-নির্মিত কুষ্টিয়া রাজবাড়ি সড়কের কাজ না হতে ভাঙনের কান্না শুনবে কি কেউ?
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড