• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কক্সবাজারে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ শীর্ষ ইয়াবা কারবারি সাইফুল নিহত

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

৩১ মে ২০১৯, ০৫:৪২
ইয়াবা কারবারি সাইফুল করিম
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি সাইফুল করিম। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দেশব্যাপী বহুল আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি সাইফুল করিম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দরের নাফ নদীর পাড়ে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ইয়াবা ডন খ্যাত হাজী সাইফুলের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে ৯ টি এলজি (আগ্নেয়াস্ত্র), ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। অভিযানে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সাইফুল করিম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের ছেলে। দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবা কারবারি এবং প্রশাসনের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, গত কয়েক দিন পূর্বে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিন চালিত বোট যোগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সদর স্থল বন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুদ করে। এর আগে গ্রেফতার হওয়া সাইফুল করিম এসব তথ্য পুলিশকে দেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা উদ্ধারের জন্য ৩০ মে দিনগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উক্ত স্থানে পৌঁছলে সাইফুল করিমের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্ম রক্ষার্থে পুলিশ ৫২ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এ সময় সাইফুল করিমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ওসি প্রদীপ দাশ এও জানিয়েছেন, সাইফুল করিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার ১নং ইয়াবা গডফাদার এবং বাংলাদেশের ১নং ইয়াবা চোরাকারবারি।

সাইফুল টেকনাফ থানার মামলা নং-১৪, তাং-০৫/০৫/২০১৯, ধারা-১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-এ এবং টেকনাফ মডেল থানার মামলা নং-১৫, তাং- ০৫/০৫/২০১৯, ধারা- ২০১৮ সনের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ)/৪১ এর এজাহার নামীয় পলাতক আসামী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের পর গা ঢাকা দেয় মোস্ট ওয়ান্টেড হাজি সাইফুল করিম। পরবর্তীতে সে বিশেষ কৌশলে সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মাস খানেক যাবত সেখানেই বেশ নিরাপদে ছিল সরকারের মাদক কারবারির তালিকার শীর্ষে থাকা এই সাইফুল। পরে গত ২৫ মে তাকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কৌশলে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

সাইফুল করিমের ইয়াবা ব্যবসার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ছড়ানো ছিল টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা পর্যন্ত। ঘাটে ঘাটে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন। বিনিময়ে তার ‘সেইফ গার্ড’ হিসেবে কাজ করতেন সুবিধাভোগী প্রভাবশালী।

এ দিকে স্থানীয়দের মতে, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের ছেলে সাইফুল করিম মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই ব্যবসা ক্ষেত্রে সফল হন। ২০১৭ সালে খেতাব পান ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) পদবী। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সিআইপি শিল্পপতি সাইফুল এখন শত কোটি টাকার মালিক।

জানা গেছে, কক্সবাজারের ব্যয়বহুল এলাকা কলাতলী পয়েন্টে হোটেলও নির্মাণ করেছেন তিনি। রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বিস্তৃত তার ব্যবসা। টেকনাফের বাসিন্দা হলেও বাস চট্টগ্রামে। ‘এস.কে. ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। গার্মেন্ট, আমদানি-রপ্তানি, কার্গো ও জাহাজের ব্যবসা রয়েছে তার। চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে রয়েছে তার একাধিক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট।

পুলিশের অনুসন্ধানে জানানো হয়, মিয়ানমারের মংডুর প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে দেশে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসা এবং চট্টগ্রামে নিয়ে পাচার করার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে সাইফুলের। যে কারণে তাকে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিও বলা হয়।

অপর দিকে গত বছরের ২৩ অক্টোবর টেকনাফে ইয়াবাবিরোধী শক্ত অভিযান শুরু করে পুলিশ। সেই অভিযানে হাজী সাইফুল করিমের রম্য অট্টালিকাসহ ইয়াবা কারবারিদের সুরম্য অট্টালিকাগুলোতে (ইয়াবা বাড়ি হিসাবে পরিচিত) আঘাত হানা শুরু করে। সে সময় পুলিশ দুইদিনে টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা ডন খ্যাত সাইফুল করিমের বাড়িসহ তিনজন ইয়াবা কারবারির অট্টালিকা বুলডোজার দিয়ে আংশিক ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

ওডি/কেএইচআর

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড