• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সেবায় ২ জন চিকিৎসক বরাদ্দ?

  বরগুনা প্রতিনিধি

২৩ মে ২০১৯, ১১:৩৬
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক আছেন মাত্র দুইজন। দুই উপজেলায় ৩৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও ৩৬টি পদ শূন্য। তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য অ্যান্ড হেলথ ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক নেই। এতে ভেঙে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা। সামান্য অসুখ হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির যেতে হয় শহরের হাসপাতালে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমতলী ও তালতলী দুই উপজেলার তিনটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য অ্যান্ড হেলথ ক্লিনিকের ৩৯টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে ৫ জন। এর মধ্যে ডা. মোনায়েম সাদ প্রেষণে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, শাকিলা আক্তার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে, ইমদাদুল হক চৌধুরী টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেষণে, টিএইচ শংকর প্রসাদ অধিকারী, ডা. মো. শাহদাত হোসেন ও ডা. জিকু শীল কর্মরত। এ তিনজনের মধ্যে জিকু শীলকে বৃহস্পতিবার বরগুনা সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। টিএইচ শংকর প্রসাদ অধিকারী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। এখন একজন চিকিৎসক মো. শাহদাত হোসেনকে দিয়ে চলছে উপজেলার সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা।

তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক মো. মেসবাউল ইসলাম চৌধুরী আছেন কর্মরত। ওই একজন চিকিৎসক দিয়ে চলে দেড় লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা।

তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে কথা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা তালতলীর গাবতলী গ্রামের মো. আবদুল মাজেদ মাস্টার জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক না থাকায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামান্য অসুখ হলেও তাদের শহরের চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হয়। এতে যেমন গরিব মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কুকুয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কোনো চিকিৎসক নেই। গুলিশাখালী, গাজীপুর ও তালতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য অ্যান্ড হেলথ ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক নেই। আমতলী ও তালতলীর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসক পদ খালি থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

এ দিকে গাজীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকে প্রায়ই তালাবদ্ধ। ওইখানে চিকিৎসক ও কর্মচারী নেই। উপকমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুন সরকার ওই ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকলেও তিনি সপ্তাহে একদিন যান। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকায় মানুষের পটুয়াখালী ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন রোগী-স্বজনদের চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে চরম অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

গাজীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুন সরকার সপ্তাহে দুই দিন যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে আনা হয়েছে। তিনি বলেন তাই আমি প্রতিদিন এখানে আসতে পারি না। এজন্য সপ্তাহে একদিন আসার চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে।

আমতলী হসপিটাল এর সূত্র থেকে জানাগেছে, প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগে ২শ জন এবং আন্তঃবিভাগে গড়ে ৫৫-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু একজন চিকিৎসক দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা দেয়া খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সাধারণ রোগীরাও ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না বলে তারা জানান।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে শত শত রোগী এসে ভিড় করলেও সকল চিকিৎসকদের কক্ষ তালাবন্ধ। রোগী ও তার স্বজনরা হাসপাতালের মেঝেতে পায়চারি করছে। অনেক মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একজন চিকিৎসক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী রহিমন, নিলুফা ও তহমিনা বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। এসে দেখি একজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। এতে প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে। কোনো মতে ডাক্তার দেখিয়েছি।

আমতলী উপজেলার নাগরিক ফোরামের সভাপতি এম এ কাদের দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমতলী স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছি। যাতে করে উপজেলার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ভালো দিতে পারি সে জন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাধারণ নাগরিকের পক্ষ থেকে।

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান দৈনিক অধিকারকে বলেন, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা চিন্তা করেই আমি আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রদর্শন করি। সাধারণ রোগীদের সাথে কথা বলেছি। হসপিটালের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলেছি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য ইতোমধ্যে আমি বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি ইনশাল্লাহ নির্দিষ্ট কিছু দিনের ভিতরে এর একটা সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. শংকর প্রসাদ বলেন, ৩৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ২ জন চিকিৎসক রয়েছে। চিকিৎসক চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগে দুশ এবং আন্তঃবিভাগে গড়ে ৫৫-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু একজন চিকিৎসক দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। দ্রুত চিকিৎসক না দিলে আমতলী ও তালতলী উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হবে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড