ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে শরীয়তপুরের চার যুবক নিখোঁজ

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চার যুবক লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধান না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

নিখোঁজ ওই চার যুবক হলেন, নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পাটদল গ্রামের প্রয়াত হাসেম মোল্লার ছেলে সুমন মোল্লা (২৬), দক্ষিণ চাকধ গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে উত্তম দাস (২৩), হারুন হাওলাদারের ছেলে জুম্মান হাওলাদার (১৯) ও চাকধ গ্রামের মোর্শেদ আলী মৃধার ছেলে পারভেজ মৃধা (২২)।

অভিবাসীদের ওই নৌকায় থাকা দক্ষিণ চাকধ গ্রামের আলাউদ্দিন মকদমের ছেলে শিশির মকদম (২২) ও শিশিরের মামা নলতা গ্রামের মিন্টু মিয়া (৩০) তিউনিসিয়ার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন।

নিখোঁজ যুবকরা গত বছর স্থানীয় মানবপাচারকারী সদস্য কেদারপুর গ্রামের আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে লিবিয়া যায়।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ডুবে যায়। ওই নৌকায় শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজন যুবক ছিল। স্থানীয় মানবপাচারকারী দলের সদস্য আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে ওই যুবকদের চুক্তি হয় লিবিয়া পৌঁছে দেয়ার।

লিবিয়া পৌঁছে দিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাদারীপুরের অলিল হোসেন নামের এক দালালের সঙ্গে ওই যুবকদের চুক্তি হয়। তাকে দিতে হয়েছে প্রত্যেক যুবকের জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আলাল হোসেন ওই যুবকদের ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নৌকায় তুলে দেন।

সোমবার (১৩ মে) নড়িয়ার দক্ষিণ চাকধ গ্রামের উত্তম দাসের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় বসে মা কবিতা রানি আহাজারি কারছেন।

নিখোঁজ পাটদল গ্রামের সুমন মোল্লার বোন আঁখি আক্তার বলেন, আমাদের বাবা-মা নেই। গরিব মানুষ, এনজিও থেকে ঋণ তুলে টাকা ব্যবস্থা করে ভাইকে বিদেশ পাঠাইছিলাম। দালাল কইছিল এক মাস লিবিয়া থাকন লাগব। তারপর ইতালি যাইতে পারব। এক বছর আগে ওরা যাওয়ার পর আর দালালকে পাই নাই। যে নৌকা ডুবে যায় ওই নৌকায় এলাকার শিশির মকদম ছিল। সে শুক্রবার রাতে ফোন করে নৌকা ডুবে যাওয়ার খবর জানান। তার কাছে ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনতে পাইছি।

নিখোঁজ চার যুবক (ছবি- সংগৃহীত)

নিখোঁজ দক্ষিণ চাকধ গ্রামের জুম্মান হাওলাদারের বাবা হারুন হাওলাদার বলেন, জমি বিক্রি করে গত রমজানে দালাল আক্কাছ মাদবরের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দেই। এক মাসের মধ্যে ইতালি পৌঁছে দেয়ার কথা। এরপর লিবিয়া থেকে ছেলে মাঝেমাঝে ফোন করে জানাতো দালালরা ওদের নির্যাতন করতো। পুনরায় আবার আড়াই লাখ টাকা পাঠাইছি। এখন আমার ছেলেটাই সাগরে ডুবে গেল।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের দৈনিক অধিকারকে বলেন, এভাবে প্রবাসে যাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেওয়া দুঃখজনক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরাও নিখোঁজ যুবকদের বিষয়ে তথ্য জানতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখছি। আর ওই যুবকদের পরিবার যদি দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

ওডি/এসএ