পিরোজপুর প্রতিনিধি
৩০ বছর ধরে অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে, পিরোজপুরের মানচিত্র থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে সোনাকুর গ্রাম। ভাঙন অব্যাহত থাকায় পথে বসেছে কয়েকশো জেলে ও মৃৎশিল্প পরিবার।
প্রতিক্ষণে সন্ধ্যা ও কালীগঙ্গা গিলে খাচ্ছে একের পর এক বসতবাড়ি। নদী রক্ষাবাঁধ নির্মাণ নিয়ে বেশ কয়েকবার জোরালো আন্দোলন হলেও সারা মেলেনি প্রশাসনের। কবে পাবে সোনাকুরবাসী নদী রক্ষাবাঁধ এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয়দের।
জেলার কাউখালী উপজেলার সোনাকুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের দুই থেকে তিনশো পরিবার নদীর পারে নিজ হাতে বানানো মাটির তৈরি সুন্দর ও সৃষ্টিশীল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু নদীর অব্যাহত ভাঙন আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে পাল সম্প্রদায়। ফলে হারাতে বসেছে বাঙালির শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য এবং ভাঙন অব্যাহত থাকায় বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার মৃৎশিল্প।
কারিগররা বলছে টানা ২৫ বছরের অব্যাহত ভাঙনে ব্যাহত হয়েছে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি মৃৎশিল্প উৎপাদন। হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে বাহারি সব পণ্য, দৈনন্দিন গৃহস্থালী কাজে এক সময় কদর ছিল এ সমস্ত সামগ্রীর।
এক সময় পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সোনাকুর গ্রামের মৃৎশিল্প ছিল দেশজোড়া। চলে যেত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আশপাশের দেশেও। বানানো হতো হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির সাজ ও পুতুলসহ বিভিন্ন সামগ্রী। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা আজ হারাতে বসেছে।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, এ ভাঙনে তাদের বসতবাড়ি নদীর গর্ভে চলে যাওয়ায় অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ভাঙন থেকে মুক্তি পায়নি কাউখালী উপজেলার সোনাকুর, সয়না, রঘুনাথপুর, হোগলা-বেতকা, রোঙ্গাকাঠী ও গন্ধর্ব গ্রামসহ প্রায় ২৫টিরও বেশি গ্রামের এক লক্ষ মানুষ। তবে তাদের একটাই প্রশ্ন কবে পাবে নদী রক্ষাবাঁধ আর কবেই বা মিলবে ভাঙন থেকে মুক্তি?
কাউখালীর সমাজকর্মী আব্দুল লতিফ খসরু জানান, নদী রক্ষাবাঁধ নির্মাণের দাবিতে গ্রাম-ঢাকায় আন্দোলন হলেও আজও হয়নি বাঁধ নির্মাণ। স্থানীয় সমাজকর্মীরা এ ভাঙন রোধে এমপি, মন্ত্রীদের কাছে বারবার তদবির করেও আশ্বাস ছাড়া বাস্তবায়ন মেলেনি বলে দাবি স্থানীয় এই সমাজকর্মীর।
তবে কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মনু মিঞা বলছেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
প্রায় ৩০ বছরের নদী ভাঙন থেকে মুক্তি এবং বাঁধ নির্মাণে এগিয়ে আসবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা কাউখালীবাসীর।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড