এম মোবারক হোসাইন, পঞ্চগড়
বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এ দিন। মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আর শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখারও দিন এটি। তবে মহান মে দিবসেও বেতন বৈষম্য ও ন্যায্য মজুরি পান না হাজারো নারী পাথর শ্রমিক।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় হাজারো নারী পাথর শ্রমিকদের অভিযোগ, পেটের দায়ে ও সংসার চালাতে তারা পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পান না। তাই তারা দ্রুত এই বৈষম্যের অবসান চান।
জানা গেছে, এক সময় এই উপজেলার নারীরা ঘর থেকে বের হতো না। কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনে ও অভাবের তাড়নায় ক্রমেই উপজেলার নারী শ্রমিক পাথর শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়ে। দেশের সর্ব উত্তরের এই উপজেলার ভূ-গর্ভস্থ পাথর উত্তোলন-প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াও সমতল ভূমিতে চা চাষ, চা পাতা সংগ্রহ, ভবন নির্মাণ ও কৃষিকাজে পুরুষের পাশাপাশি এদের অবদান অপরিসীম। পাথর ভাঙাসহ বিভিন্ন কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে এসব নারী শ্রমিকরা।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় পাথরের কাজ করেন অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। সেখানে পুরুষ শ্রমিকরা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৪৫০-৫০০ টাকা, কিন্তু একই সময় পর্যন্ত কাজ করে নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকা।
সারাদিন পাথর ক্র্যশিং মেশিনে হারভাঙা পরিশ্রম করে সংসারের হাল ধরেছে এসব নারী শ্রমিকরা। কিন্তু সমান পরিশ্রম করলেও পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকরা এখনো মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ।
পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও সমান কাজ করে যাচ্ছে
ফাতেমা বেগম দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগত স্বামী পালায় ঢাকাত আরেকটা বিহা করিছে, ঐঠে আরহ দুইঝন ছুয়া ছে। পাথর ক্র্যশিং মেসিনত কাজ করে সংসার চালাছু । দুই ছুয়াক লেখাপড়া করাছু । পুরুষলার লগত ঔ সমান কাজ করছু। কিন্তু হামার মুজুরী উমার চেয়ে কম। এইখান রৌদত এইরকম ঘাম ঝড়চে হামার। কিন্তু হামার মুজুরী কম হবে কেনে ? পুরুষলার মতো মোর একশ টাকা বেশি হলে ছুয়ালাক ভালো খাবার তো কিনে দিবা পারিম।’
সাহেব জোত গ্রামের জরিনা বেগম দৈনিক অধিকারকে বলেন, নারীদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই জীবনযুদ্ধে পরিবার পরিজনদের আহার জুটানোর তাগিদে পাথরের কাজ করতে হয়।
আয়মনা বেগম দৈনিক অধিকারকে বলেন, চা পাতা সংগ্রহের কাজ করি যা পায় তা নিয়ে স্বামীকে নিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। সেই খুব সকালে বাড়ি থেকে কাজ শুরু হয়, যা চলে সূর্য ডোবা পর্যন্ত। কিন্তু ন্যায্য মজুরি পাই না। কেউ আমাদের কষ্ট দেখে না, এমনকি খবরও নেন না।
তেঁতুলিয়া উপজেলার পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর বালি সমিতির সভাপতি মজিবর মাস্টার দৈনিক অধিকারকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে কর্মরত নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্য চলছে । আমরা সমিতি থেকে ব্যবসায়ীদের সমান মজুরি দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।
নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পুরুষ শ্রমিকরা ভারী কাজগুলো করে, তাই তাদের বেতন বেশি। কিন্তু নারী শ্রমিকরা শুধু দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড