• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প দিন দিন বিলুপ্তির পথে

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব

১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:২৯
কিশোরগঞ্জ
মৃৎ শিল্পের পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত গৃহকর্মী

বাঙালির শত বছরেরর পুরনো ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প। একেকটি শিল্প বিস্তারের পেছনে রয়েছে একেকটি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎ শিল্প। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। যারা মাটি নিয়ে কাজ করে পেশায় তারা কুমার বা পাল। দিন দিন যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে তারা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারপরও দেশে এমন এলাকা বা এমন গ্রাম আছে যেখানে এখনো বাংলার ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে।

এমনি একটি গ্রাম হচ্ছে কুলিয়ারচরের কুমার পাড়া। পুরনো একটি ছোট পাড়া। এ পাড়ায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অর্ধশতকের চেয়েও কম। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও কর্মঠ মানুষের সংখ্যাই বেশি। ঐ পাড়ার সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখা গেল প্রায় ঘরগুলো মাটি, ছন ও টিনশেড দিয়ে তৈরি। বাড়ির সামনে ছোট্ট উঠান। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাদামাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, কলস, হাতি, ঘোড়া, মাছ পুতুলসহ ছোট-বড় নানা রকমের পাত্র।

তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। আধুনিকতার প্রবল স্রোতে বাংলার প্রাচীন এই শিল্পের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্পের সাথে বহু বছর ধরে জড়িত মানুষগুলোও। বর্তমান সভ্যতার সাথে পেরে উঠছে না এই মাটির কারিগররা। আগেই বিভিন্ন মাটির তৈরি দ্রব্যাদি ব্যবহার হলেও মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এসব সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

যতই দিন যাচ্ছে তারা এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। আধুনিকতার নির্মম স্পর্শে এই শিল্পের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। বলতে গেলে বিলুপ্তির পথে প্রায় এই শিল্প এবং এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা আজ অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তারা হারাতে বসেছে তাদের নিপুণ শৈল্পিক গুণাবলী। এতকিছুর পরও অনেকে শত কষ্টের মাঝেও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কুলিয়ারচর কুমার পাড়ার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ পরিমল পালের সাথে কথা হলে উনি কুমারদের বর্তমান অবস্থার কথা জানান, বহু আগে তার পূর্বপুরুষেরা এ গ্রামে এসেছিলেন। তখন থেকে এখানে তাদের বসবাস।

পরিমল পাল আরও বলেন, আমাদের এই কাজ করে আর পোষায় না। কোনো মতে দিন কাটাই আমাদের কিছু জমিজমা চাষাবাদ করে। তাছাড়া আধুনিক যুগে আমরা আগাতে পারছিনা।

দৈনিক অধিকারমৃৎ শিল্পের পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত গৃহকর্মী

তাদের এই কুমার বাড়িতে ঢুকলে চোখে পড়বে মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস। কোনোগুলো কাঁচা, অর্থাৎ পোড়ানো হয়নি আবার কিছু শুকিয়ে রাখা হয়েছে, কিছু পুড়িয়ে রং করেও বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

আরেক পুরানো কারিগর শুধাংশু পালের স্ত্রী স্বরসতী পালের সঙ্গে কথা হয়, তিনি জানান, আমাদের কষ্টের শেষ নেই, কোনোমতে মাটির তৈরি জিনিসগুলো বিক্রি করে আমাদের চলতে হয়। আমাদের কোন সন্তান নেই, এই বুড়ো বয়সেই উনি (তার স্বামী) ভার নিয়ে বিভিন্ন হাটে গিয়ে বেচা কেনা করে। শুধু মাত্র বৈশাখের মেলা আসলেই আমরা বেশি করে কাজগুলো করি আর সারা বছর বেশিরভাগ সময় কাজ ছাড়াই বসে থাকি।

জয়া রানী পাল বলেন, ‘মাটির এসব কাজ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমাদের কয়েক পুরুষ ধরে এ কাজ করে আসছে। আমরাও করছি। মাঠ থেকে মাটি এনে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে আমরা জীবিকা চালাই।’

স্বদেশ পাল বলেন, ‘আমরা আর এই সব কাজ করতে পারছি না। মেলামাইন, সিরামিক ও প্লাস্টিকের কারণে আমরা তাদের সাথে খরচ আর তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। যদি আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ আর সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমরা মনে হয় কিছুটা হলেও এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারব। মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন কুমার পাড়ার কুমাররা।

কুলিয়ারচর উপজেলার যুব উন্নয়ন অফিসের ক্রেডিট সুপারভাইজার নজরুল ইসলামের নিকট এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মৃৎশিল্প আধুনিকায়ন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড