• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্ম দিবস পালিত

  আমিনুল ইসলাম জুয়েল, পাবনা

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১৭
পাবনা
চিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালায় তার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ

শনিবার (৬ এপ্রিল) পাবনায় নানা আয়োজনে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্ম দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িতে ও তাঁর স্মৃতিবিজড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিন ব্যাপি সুচিত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

সকালে পাবনা শহরের গোপালপুরে মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়ির সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালায় তার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদসহ তাঁর ভক্তরা। এরপর কেক কেটে আনন্দ প্রকাশ করেন সকলে।

আয়োজন করা হয় চিত্রাংকন, কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা। জন্মদিন উপলক্ষে সুচিত্রা সেনের বাড়িতে সুচিত্রা সেনের গান ও উত্তম-সুচিত্রা অভিনিত সিনেমা প্রদর্শিত হয়। বিকালে মহানায়িকার স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যাপিঠ পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা-৫(সদর)আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কাজী আতিয়ুর রহমান, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবি সোহানী হোসেন, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদের কলকাতা শাখার আহবায়ক দেবারতী ভট্টাচার্য, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ পাবনার সহ সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, আখতারুজ্জামান আখতার, সাধারন সম্পাদক নরেশ মধু প্রমুখ। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি)শাহেদ পারভেজ, পাবনা সদর ইউএনও জয়নাল আবেদীন, পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন, জেলা কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জুরী খান সৌমী, স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সদস্য সরোয়ার উল্লাস, স্বাধীন মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী নায়িকা সূচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ী পাবনা শহরের গোপালপুর হেমসাগর লেনে। তিনি এখানকার মহাকালি পাঠশালায় এবং পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর পরিবারের সাথে ভারত চলে গেলে বাড়িটি প্রথমে জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে এবং জামায়াত পরিচালিত পরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়া হয়।

অনেক আন্দোলনের পর এবং আইনী লড়াই শেষে ২০১৫ সালে বাড়িটি দখমুক্ত হলে আবারো জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ফিরে যায়। সুচিত্রা সেনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং তাকে স্মরণ করতে ২০০৪ সাল থেকে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে।

উল্লেখ্য, তৎকালীন বৃহত্তর পাবনার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ) বেলকুচি উপজেলার সেন ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেন সুচিত্রা সেন সুচিত্রা সেন ওরফে রমা। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে।

তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে চাকুরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দুই বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান। তার পারবারিক নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ক’মাস আগে তার বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়ি-ঘর, চাকুরি সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারত পাড়ি দেন। সুচিত্রা সেনও পরিবারের সাথে চলে যান। কলকাতা যাবার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়।

পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধু হয়ে ঘর সংসারের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। সিনেমায় অভিনয় শুরু পর নাম হয় সুচিত্রা সেন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে “শেষ কোথায়” নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি।

এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি “সাত নম্বর কয়েদি” ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবিদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবী নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান।

সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।

১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেষ্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন।

২০০৫ সালে তাঁকে দাদা সাহেব ফলকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সব থেকে বড় সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিলো তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি ভারতে পরলোকগমন করেন।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড